মেধাবিকল জাতি হওয়ার শঙ্কা
- ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
সিসা একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর ধাতু। দেশে দুই থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের শতভাগের শরীরে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। ৬০ শতাংশ শিশু তথা তিন কোটি ৬০ লাখ শিশুর রক্তে পাওয়া গেছে সিসা। এর মধ্যে এক কোটি শিশুর রক্তে এমন উচ্চ মাত্রার সিসার উপস্থিতি রয়েছে, যা মারাত্মক। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
শিশুর ওপর সিসার প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। সিসা তাদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ব্যাহত করে। শিশুর বুদ্ধি বাড়ে না। মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করে এবং লেখাপড়ায় তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। তার আচরণগত সমস্যা তৈরি করে এমনকি শ্রবণ ও বাক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ছেলেবেলা থেকে যাদের শরীরে সিসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি থাকে, বয়ঃপ্রাপ্তির পর আচার-আচরণে তারা আগ্রাসী হয়ে উঠবে এমন আশঙ্কা খুব বেশি। বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য সিসা ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনে। তারা সারা জীবনের জন্য স্নায়বিক, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতার মুখোমুখি হয়। মারাত্মক সিসাদূষণ মৃত্যুরও কারণ।
সিসাদূষণে মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ আক্রান্ত দেশ। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব। সংস্থাটি জানায়, সিসাদূষণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩১ হাজার মানুষ মারা যায়। এ সংখ্যা দেশের মোট মৃত্যুর ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। সিসাদূষণের বিরূপ প্রভাবে মানুষের উৎপাদনশীলতা কমে ও সে কারণে হ্রাস পায় জাতীয় উৎপাদনশীলতা। দেশে সিসা প্রভাবিত জাতীয় উৎপাদনশীলতা যে পরিমাণে কমে তাতে ক্ষতি হয় বার্ষিক ১৬০ কোটি ডলারের সমান, যা দেশের তৈরী পোশাক খাতের মোট আয়ের প্রায় অর্ধেক। বিষয়টি কোনোভাবে উপেক্ষা করার মতো নয়।
বাংলাদেশে খাদ্যচক্র সিসাদূষণে আক্রান্ত। সিসার প্রধান উৎস সিসার ব্যাটারি, সিসামিশ্রিত রঙ, সিসার রিসাইক্লিং, মাটি ও ধাতুর তৈজসপত্রে ব্যবহৃত সিসার রঙের প্রলেপ, মসলা, ই-বর্জ্য, সোনার বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ও গয়না তৈরি, আয়ুর্বেদিক ওষুধ, আমদানি করা বাসমতী চালেও সিসা পাওয়া গেছে।
দেখা যাচ্ছে, খাদ্যচক্রসহ দৈনন্দিন জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে আমরা কোনো না কোনোভাবে সিসার সংস্পর্শে আসছি না। সবজি, চাল ও মসলার নমুনায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানবদেহে সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করেনি। এটিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম ক্ষতিকারক রাসায়নিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থার (সিডিসি) মতে, মানবদেহে সিসার গ্রহণীয় মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রাম।
গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকা শহরের শতভাগ শিশুর রক্তে ক্ষতিকর ধাতু সিসার উপস্থিতি রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রাম বা তারও বেশি। ঢাকা শহরের ৫০০ শিশুর ওপর চালানো সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি খুব কম হয়নি। সভা-সেমিনারও হয় যথেষ্ট। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে প্রতিকারের কোনো পদক্ষেপ কমই চোখে পড়ে। দেশে একটি আইন করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- সরকারি অনুমোদন ছাড়া কেউ সিসা প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে পারবে না। এ আইন কেউ মানে না। সিসা প্রক্রিয়াজাতকরণের কত অংশ অনুমোদিত সে বিষয়ে তথ্যও নেই কারো কাছে। সরকারের পক্ষ থেকে নজরদারির কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।
এ পরিস্থিতিতে আমরা বাংলাদেশীরা অচিরেই বিশ্বে একটি স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন বৈকল্যকবলিত জাতিতে পরিণত হয় কি না সেটিই শঙ্কা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা