২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রিকুইজিশনের নামে আবার হয়রানি

এ কাজে বিরত থাকতে হবে

-

ক্ষমতার অপব্যবহার আমাদের দেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। যার ক্ষমতা আছে তিনিই তার অপব্যবহার করেন। রাজনীতিকদের মধ্যে এ প্রবণতা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। এর ফল হিসেবে এটি সংক্রমিত হয় পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে। সম্প্রতি পুলিশ ও প্রশাসনের এ আচরণ যেন লাগামহীন হয়ে পড়েছে। একসময় পুলিশের রিকুইজিশন সাধারণ মানুষকে হয়রানির হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ব্যক্তিগত গাড়ি রিকুইজিশনের নিয়ম থাকলেও তার বালাই ছিল না। পুলিশের কর্মকর্তার স্ত্রী-কন্যার শপিংয়ের কাজেও ব্যক্তিগত গাড়ি রিকুইজিশন করা হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে। এমনকি রিকুইজিশন করা গাড়ি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হেফাজত থেকে হারিয়ে গেছে এমনও দৃষ্টান্ত আছে। সাধারণ মানুষের সেই ভোগান্তি কিছুটা কমে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে।
২০১৯ সালে এ বিষয়ে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করা হলে বিষয়টি আদালত বিবেচনায় নেন। শুধু তাই নয়, আদালত দেশের চারজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞকে এমিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাদের মতামত গ্রহণ করেন। পরে একই বছর ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেন। তাতে নির্দেশনা দেয়া হয় যে, শুধু জনস্বার্থে কারো ব্যক্তিগত গাড়ি রিকুইজিশন করা যাবে। ব্যক্তিগত, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি রিকুইজিশন করার ক্ষেত্রে মালিককে কারণ উল্লেখ করে আগে নোটিশ দিতে হবে। রিকুইজিশনের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ সাত দিন। এ সময় গাড়ির তেল ও আনুষঙ্গিক খরচ কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। রিকুইজিশন করা গাড়ির কোনোরকম ক্ষতি হলে ১৫ দিনের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। হাইকোর্টের ওই নির্দেশনার পর অবস্থার কতটা উন্নতি হয়েছে আমাদের জানা নেই। তবে মানুষের অকারণ হয়রানি কমেছে; কিন্তু এ দেশে কোনো নিয়মই টেকসই হয় না।
পত্রিকান্তরের এক খবরে সম্প্রতি জানা যাচ্ছে, পুলিশ ও প্রশাসনের বেপরোয়া রিকুইজিশন নিয়ে এবার বিড়ম্বনায় পড়েছেন দেশের পর্যটন শিল্পের ব্যবসায়ীরা। এটি বেশি ঘটছে হাওর অঞ্চলে। অভিযোগ উঠেছে, সেখানে হোটেল-মোটেল-রিসোর্টের কক্ষ, যানবাহন, জাহাজ, নৌকা, হাউজবোট ইত্যাদি যখন তখন ইচ্ছামতো রিকুইজিশন করছে পুলিশ ও প্রশাসন। এমনকি পর্যটকদের জন্য বুকিং দেয়া হয়েছে এমন কক্ষও রিকুইজিশনের নামে দখল করে ভোগ করছেন তারা। এতে শুধু যে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতি ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন তা-ই নয়; পর্যটকরাও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তার চেয়েও বড় কথা, এতে দেশের নাজুক ও অসংগঠিত পর্যটন খাতের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে নেতিবাচক হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।
হাওর অঞ্চলে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত থাকে পর্যটন মৌসুম। এ সময় প্রশাসনের লাগামহীন রিকুইজিশন নিয়ে সম্প্রতি পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে ট্যুর অপারেটরদের শীর্ষ তিন সংগঠন। এতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি হাউজবোট রিকুইজিশন নেয়া সম্পর্কিত যে অভিযোগ করা হয়েছে তা রীতিমতো স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। সমস্যার সমাধানে মন্ত্রণালয় ও পর্যটন বোর্ডের বড় কর্তাদের অপারগতার পর শেষ পর্যন্ত খোদ অর্থমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। দেশের প্রশাসন কিভাবে চলছে এটি তার একটি নমুনা।
এখন ট্যুর অপারেটররা পর্যটন মৌসুম ও ছুটির দিনগুলোতে হোটেল-মোটেলের রুমসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব কিছু রিকুইজিশনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পৃথিবীর কোথাও পর্যটকবাহী যানবাহন রিকুইজিশনে নেয়ার নজির নেই। আমরা বিষয়টিকে এভাবে দেখতে পারছি না। প্রকৃত জনস্বার্থসংশ্লিষ্টতা ছাড়া যানবাহন কেন, সব কিছু এবং সব ধরনের রিকুইজিশনই আইনত অবৈধ। হাইকোর্টের এ সম্পর্কিত ২০১৯ সালের রায় এ ক্ষেত্রে বাড়তি আইন হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই আইনের রক্ষকদের অবশ্যই বেআইনি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল