আরো অবনতির আগে ব্যবস্থা নিন
- ২৪ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
সরকার তিন মেয়াদে টানা ব্যাপক উন্নয়নের প্রচারণা চালিয়েছে। উন্নয়নকে এতটা অপরিহার্য উপাদান বানিয়েছে- এর জন্য গণতন্ত্রও গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। বাস্তবে দেখা গেল, সরকারের এ ধরনের নীতি জবাবদিহিহীন, ত্রুটিপূর্ণ ও ভুলে ভরা। সরকার সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব নিতে চেয়েছে বিদ্যুৎ স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলে। অথচ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষে এসে বিদ্যুৎ খাত মুখ থুবড়ে পড়েছে। উন্নয়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রসদ গ্যাসের সরবরাহ ব্যবস্থাও নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। ফল হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত বস্ত্রশিল্প ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়েছে। বস্ত্র উৎপাদকরা জানাচ্ছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের এ অচলাবস্থা চললে অচিরে দেশের বেশির ভাগ কারখানা লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ রাজধানীতে শনিবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জানায়, মার্চে কারখানগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ সঙ্কট দেখা দেয়। জুলাইয়ে সেটি আরো প্রকট হয়। আগস্টে পরিস্থিতি এতটা অবনতি হয়- ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, কুমিল্লøা ও চট্টগ্রাম অর্থাৎ দেশের প্রায় সব বস্ত্রকল দিনে মাত্র ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে। এতে উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে। এতে সুতা উৎপাদনে কিভাবে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে তা তুলে ধরেন এক নেতা। নিরবচ্ছিন্ন কারখানা সচল থাকলে এক কেজি সুতা উৎপাদনে খরচ এক ডলার ২৫ সেন্ট। গ্যাসের অভাবে অর্ধেক দিন কারখানা বন্ধ থাকায় এক কেজি সুতার খরচ বেড়ে আড়াই ডলার পড়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্থানীয় সুতাকল নিট পোশাকের ৮০ শতাংশ কাঁচামালের জোগান দেয়। গত বছর আট বিলিয়ন ডলার মূল্যের সাত বিলিয়ন মিটার কাপড় জোগান দিয়েছে। পেট্রোবাংলা আশ্বস্ত করেছিল- অক্টোবরে গ্যাস পরিস্থিতির উন্নতি হবে, নভেম্বরে আরো উন্নতি হবে ও ডিসেম্বরে সঙ্কট থাকবে না। বস্ত্রকল মালিকরা বলছেন, পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ হয়েছে। তারা আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন। ইতোমধ্যে গত কয়েক মাসে এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে তাদের দাবি। সাথে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এ অবস্থায় কারখানা চালু রাখার ব্যয় আরো বেড়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এতে রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক ছাঁটাই, বেতন বন্ধ ও কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বস্ত্রকল মালিকরা এ জন্য কাউকে দায়ী না করলেও এটি স্পষ্ট যে, আমরা মূলত টেকসই উন্নয়নের পথে হাঁটিনি। শিল্পের প্রধান কাঁচামাল গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করতে পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হইনি। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে কিছু ব্যক্তিকে লাভবান করার ফন্দি করেছি, আর গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা নিরাপদ করার পরিবর্তে স্পট মার্কেট থেকে সংগ্রহ করে আরো কিছু লোককে ধনবান বানিয়েছি। এতে করে বৈশ্বিক সঙ্কটকালে আমাদের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
স্পট মার্কেট থেকে হলেও জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন মালিকরা। অতীতে কী হয়নি সে দিকে নজর না দিয়ে দরকার হলে বাড়তি দামে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে গ্যাস কিনে বস্ত্র খাত বাঁচাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তাদের মতে, প্রতিদিন গ্যাস সরবরাহ রয়েছে দুই হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তা বাড়িয়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট করা হলে বস্ত্রকলগুলো প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ পাবে। বস্ত্রশিল্প বাঁচাতে এ খাতে উদ্যোক্তাদের পরামর্শ আমলে নিয়ে সঙ্কটের আপাত সমাধানে সরকার এগিয়ে আসবে এমনটি সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করেন।
গ্যাস-বিদ্যুতের অপ্রতুল সরবরাহ পুরো জাতিকে দুর্ভাবনায় ফেলেছে। বাসা-বাড়িতে মানুষজন কষ্টকর এক জীবনযাপন করছেন। এ থেকে আশু মুক্তির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তারপরও আমরা আশা করব, বিগত দিনে ঘটে যাওয়া দুর্নীতি ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার সঠিক পথে হাঁটার চেষ্টা করবে, যাতে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে না পড়ে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা