২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কা

প্রয়োজনীয় মজুদ নিশ্চিত করুন

-

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ধেয়ে আসছে। আমাদের অর্থনীতিও খুব একটা ভালো নেই। উপরন্তু দেশে বেশির ভাগ পণ্য ও পরিষেবার মূল্য দক্ষিণ এশিয়ার গড় দামের চেয়ে বেশি। যেখানে আমাদের এখানে আধা কেজি পাউরুটির দাম ৬২ টাকা; সেখানে পাকিস্তানে ৪৫ টাকা; ভারত ও নেপালে ৪৮ টাকা। এমনকি শ্রীলঙ্কাতেও এর দাম ৫০ টাকা, যা বাংলাদেশের তুলনায় যথেষ্ট কম। ফলে দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে শুধু আমদানি পণ্যে নয়, দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে। এটি সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণ মানুষ কত তীব্র চাপে আছে, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এক তথ্যে তা অনুমেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় চার সদস্যের একটি পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় সব খাদ্যপণ্যসহ সার্বিক খরচ ছিল ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর খাদ্যপণ্যের মূল্য বিবেচনায় এ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাসে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। গত পৌনে চার বছরে খাদ্য খাতে পরিবারের ব্যয় ২৭ থেকে ৩৮ শতাংশ বেড়েছে।
এমন বাস্তবতায় সিপিডির গণমাধ্যম ব্রিফিংয়ে গত বৃহস্পতিবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন বলছে- দুর্ভিক্ষ আসছে এবং বিষয়টি সত্য। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি আবহাওয়ার ভিন্ন রূপ হিসেবে বন্যা, খরা বাড়ছে।
আসন্ন বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি কী তা সরকার জনগণের কাছে খোলাসা করছে না; বরং সরকারের কর্মসূচিতে এক ধরনের অগোছালো ভাব দেখা যাচ্ছে। অথচ যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের বিষয়টি নিয়ে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক। আমাদের সরকারের জবাবদিহিতার বড় অভাব। একটা সময় তাই আমাদের বড় বিপদের মুখে পড়তে হবে বলে শঙ্কা বাড়ছে।
সবার জানা, কৃষি উৎপাদনে জ্বালানি ও সার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে শুধু পণ্য সরবরাহে সমস্যা হয়নি, কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তাই খাদ্যসঙ্কট মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। একই সাথে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কের হার কমানোর সাথে সাথে বেসরকারি খাতে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বেতন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। জনগণ যাতে স্বাভাবিকভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী আমদানিতে অগ্রিম আয়কর, অগ্রিম কর ও নিয়ন্ত্রক শুল্ক অপসারণ করতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিকল্প নেই। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা যেখানে বলছে, ভবিষ্যতে বিশ্বের ৪২টি দেশে খাদ্যসঙ্কট হতে পারে। এ তালিকায় বাংলাদেশ আছে। অথচ বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা গড়ে তোলা হয়নি। মানুষ খাবার কমিয়ে দিয়েছে। তারপরও কমপক্ষে ২৯টি খাদ্যসামগ্রী আমদানিতে বর্তমানে উচ্চ কর ও শুল্ক আদায় হচ্ছে।
আমরা মনে করি, খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কা থাকায় উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য সারের উচ্চমূল্যের কারণে এ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে। কারণ, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্যপণ্য কেনায় সমস্যা তৈরি হতে পারে। নিজের মজুদ নিশ্চিত না করে কোনো দেশ পণ্য রফতানি করতে চাইবে না। ভবিষ্যতে ডলার থাকলেও বিশ্ববাজারে পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্য না-ও থাকতে পারে।
আমরা যদি দুর্ভিক্ষ এড়াতে চাই তাহলে সময় ক্ষেপণ না করে এখনই প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ গড়ে তুলতে হবে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কের হার কমানো ও বেসরকারি খাতে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বেতন বাড়াতে হবে। সেই সাথে দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা আরো বাড়াতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
শেরপুরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু গণমাধ্যমে হামলা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব : তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ গণমাধ্যমের ওপর হামলা সহ্য করা হবে না : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জাপানে রকেট পরীক্ষাস্থলে ভয়াবহ আগুন সিলেটে ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটক ৩ আদানির সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি : হাইকোর্টের লিখিত আদেশ প্রকাশ কুমিল্লা সীমান্তে মাদকসহ ভারতীয় নাগরিক আটক এশিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে রাশিয়ার পাল্টা হুমকি ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তানে নিহত আরো ৬, সেনা মোতায়েন রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

সকল