কায়িক পরিশ্রম বাড়াতে চাই গণসচেতনতা
- ২১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া না করে অলস বসে থাকা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। স্বাস্থ্য নিয়ে এ ধরনের ঝুঁকির বিষয়টি আধুনিক মানুষদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। মানব ইতিহাসে এই সঙ্কটটি এখন অনেক বড় আকারে দেখা দিয়েছে। এর প্রধান কারণ পুঞ্জীভূত সম্পদ ও ধনিক শ্রেণীর উদ্ভব। এই শ্রেণীর সংখ্যা ইতিহাসের কোনো পর্যায়ে কখনো এত বাড়েনি। এরা অর্জিত বিপুল সম্পদ ভোগ করতে চায়। এদের বড় একটি অংশের মধ্যে কাজকর্মের প্রতি আগ্রহ থাকে না। শ্রমের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও এই স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম কারণ। বহু দেশে জাতীয়ভাবে কায়িক শ্রমকে সম্মানের সাথে দেখা হয় না। ছোটখাটো কাজকে দেখা হয় নিম্নশ্রেণীর মানুষের কাজ হিসেবে। বাংলাদেশে বিপুল অংশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা কারণ হয়ে উঠছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শারীরিক সক্রিয়তা নিয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বৈশ্বিক এ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে কিশোরীদের ৬৯ শতাংশ শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়। কিশোরদের মধ্যে এ হার সামান্য কিছুটা কমে ৬৩ শতাংশ। এ হার ১৮ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের ১৬ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ। ৭০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের মধ্যে ১৯ শতাংশ সক্রিয় নয় ও একই বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে তা ৪৬ শতাংশ। শারীরিক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উপলব্ধি করে ডব্লিউএইচও বিশ্বব্যাপী এ জরিপকাজ করে। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে- ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ হৃদরোগ, স্থূলতা, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগে ভুগবে। শরীর সচল রাখার সচেতনতামূলক উদ্যোগ নেয়া না হলে এ জন্য প্রতি বছর দুই হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হবে।
ওই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগে। এর পেছনে প্রতি বছর ব্যয় দ্রুত বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু দেশ বেশ সচেতন। তারা জাতীয়ভাবে শারীরিক কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য গণসচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিশ্বে ৭৫ শতাংশ দেশ তাদের কিশোর-কিশোরীদের সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে। এমনকি বিশ্বের ৩০ শতাংশ দেশ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের শারীরিক সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে। অথচ আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ যারা কিশোর-কিশোরী, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশ অলস নিষ্ক্রিয়। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সচেতনতামূলক তাগিদ না থাকায় সামনে এর হার আরো বাড়বে। তাই শারীরিকভাবে সক্ষম মানুষের সংখ্যা এ দেশে কমার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- জনগণকে হাঁটাচলা ও সাইকেল চালানো উৎসাহিত করতে বাংলাদেশে কোনো জাতীয় প্রচারণা নেই। এ ছাড়া শিশুরা স্বাভাবিক খেলাধুলা করবে, সে সুযোগ দেশের শহরাঞ্চলে একেবারে সঙ্কুচিত। বেশির ভাগ স্কুলে খেলার মাঠ নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভূমিখেকোরা বাকি মাঠগুলোকে হয় দখল করে ফেলেছে না হয় সেগুলো দখলের পর্যায়ে রয়েছে। কিছু দিন ধরে রাজধানীর নামকরা স্কুল মানারাতের মাঠটি দখল করার পাঁয়তারা লক্ষ করা যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রত্যন্ত গ্রামেও শিশুরা মাঠে ময়দানে খেলবে- সে প্রবণতা কমে আসছে। মোবাইলসহ নানা প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে শিশুরা স্বাভাবিক খেলাধুলা বন্ধ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় উদ্যোগে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা না গেলে ভবিষ্যতে আমরা একটি অসুস্থ জাতি পাবো। এদের দিয়ে আমরা ভালো কিছু আশা করতে পারি না।
ডব্লিউএইচও অসংক্রামক ব্যাধি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কথা উল্লেখ করেছে, তবে মহামারী করোনায় দেখা গেল- অলস দেহের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধিও দাপট দেখিয়েছে। এ নিয়ে জরিপ করলে ঠিকই জানা যাবে। একটি সুস্থ সবল জাতিগঠনে শারীরিক সক্রিয়তার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি মানুষকে শরীরের জং ধরার হাত থেকে বাঁচাতে হলে দিনের একটি নির্ধারিত সময় অবশ্যই কায়িক শ্রম দিতে হবে। বদলাতে হবে কায়িক শ্রমের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবাই যেন কায়িক শ্রমের কাজে কোনো ধরনের হীনম্মন্যতায় না ভোগে, সেই সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা