২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বৈদেশিক মুদ্রার হাহাকার চলছে

জনশক্তি রফতানিতে গতি আনুন

-

জনশক্তি রফতানির প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হচ্ছে না। একের পর এক জটিলতা বাড়ছে বিদেশে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায়। দেশে এ মুহূর্তে বৈদেশিক মুদ্রার একরকম হাহাকার চলছে, সরকার কৃচ্ছ্রতার নীতি নিয়েছে। জরুরি আমদানিতে এলসি খোলার মতো ডলার পেতেও হিমশিম খাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। রেমিট্যান্স সংগ্রহে প্রণোদনার পরিমাণ বাড়িয়েও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় গ্যাস আমদানির অর্থও জোগান দিতে পারছে না সরকার। বিদ্যুতের অভাবে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এমন একটা সময়ে জনশক্তি রফতানির সব সুযোগ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজে লাগানো জরুরি। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ-আয়োজন দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনো পর্যায়ে; বরং ঘটছে উল্টোটা। সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের ভিসাপ্রক্রিয়া নিয়ে চলছে জটিলতা। ঢাকার সৌদি দূতাবাস ভিসা দিতে পাসপোর্ট জমা নেয়া ও বিতরণের কাজটি নিজেরা করতে চাচ্ছে না। এ জন্য দু’টি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে। দূতাবাস জানিয়েছে, ২৪ অক্টোবর থেকে বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও পাসপোর্ট জমা নেয়া হবে। ৩১ অক্টোবর থেকে নির্ধারিত আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব কাজ চলবে। এটি কোনো নতুন ঘটনা নয়। অনেক দূতাবাস তৃতীয় কোনো মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা নেয়; কিন্তু সৌদির ক্ষেত্রে সেটি মেনে নিতে কেন আপত্তি বোধগম্য নয়। এ জটিলতায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সৌদি গমনেচ্ছু হাজার হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবার। সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়া আট লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৯ বাংলাদেশী কর্মীর পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৬৫৩ জনেরই গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। এ বিশাল বাজার নিছক পাসপোর্ট জমা নেয়ার প্রক্রিয়ার কারণে আটকে থাকা কোনোভাবে কাম্য নয়। বিষয়টি সরকারিভাবে ও বায়রার মাধ্যমে যত শিগগির সম্ভব নিষ্পত্তি করে কর্মী পাঠানোর পথ খুলে দেয়া দরকার।
একই অবস্থা চলছে, অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে খুব ধীর গতিতে। চার বছর পর সে দেশে কর্মী নিয়োগে বিএমইটি থেকে ৪০ দিনে ছাড়পত্র ইস্যু হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৫৮০টি। আর শ্রমিক পাঠানো হয়েছে দুই হাজারের মতো। খবরে বলা হয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের নিয়োগানুমতি পেতে জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সিগুলোকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নানা রকম হয়রানি ও উদাসীনতার অভিযোগ আছে বিএমইটি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বহির্গমন ছাড়পত্র পাওয়া নিয়ে কর্মীদের দুর্ভোগ তাই দিন দিনই বাড়ছে। অথচ দ্রুত কর্মীদের পাঠানো হলে রেমিট্যান্স আসার গতি ও পরিমাণ উভয়ই বাড়বে। এখন পর্যন্ত ছয় লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় কর্মরত। আগামী তিন বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক পাঠানোর সম্ভাবনার রয়েছে; কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের অবহেলায় এভাবে ধীর গতিতে কাজ চলতে থাকলে এ সম্ভাবনা কাজে লাগানো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বহুদিন পর বাজারটি নতুন করে খুলে যাওয়ার পর সেই বাজারের সুযোগ না নেয়া দেশের জন্য শুধু ক্ষতিকর নয়, আত্মঘাতী হবে। কারণ বাজারটি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো এ সুযোগ লুফে নিতে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য দেখাবে না।
এ মুহূর্তে রেমিট্যান্স বাড়ানোর অন্যতম উপায়- শ্রমশক্তি রফতানি বাড়ানো। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় কমেছে ২৪ শতাংশ। অথচ শ্রমিক রফতানির মাধ্যমে এই আয় বিপুলভাবে বাড়ানোর সব সম্ভাবনা আমাদের হাতের নাগালে। বিষয়টি অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেখা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement