নিয়মিত ত্রুটির পরও ইসি সন্তুষ্ট
- ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
আওয়ামী লীগ সরকার জেলা পরিষদ নির্বাচন সাড়ম্বরে চালু করেছে। এই পরিষদের নির্বাচনে নিয়ম-কানুন সব ঠিক রেখেছে। তবে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার পরিবর্তে সরকার নিজেদের পছন্দের লোকদের মধ্যে জেলা পরিষদ ভাগবাটোয়ারা করে দিচ্ছে। বিশেষ করে দলটির যেসব নেতাকে কিছু সুযোগ দেয়া প্রয়োজন মনে করছে তাদের জন্য জেলা পরিষদ একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র। হিসাব মতে, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত সদস্যরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার। প্রায় সব জেলায় কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব মেয়র-কাউন্সিলর-চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ভোটারবিহীন দলীয় পছন্দের মাধ্যমে সরকার নিযুক্ত করেছে। এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদের এসব পছন্দের জনপ্রতিনিধিরাও অনেক ক্ষেত্রে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলেন না। সরকার নিরঙ্কুশভাবে নিজের পছন্দকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে। এ অবস্থায় জেলা পরিষদ সদস্যরা কিভাবে জনপ্রতিনিধি হতে পারেন? নাগরিকরা সেই প্রশ্ন করতে পারে।
এবারে ৫৯টি জেলা পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৫ জনই কোনো ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়ে গেছেন; যদিও সরকারি দলের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল না। এই নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছিল না। স্থানীয় সরকারে অংশ নিতে গিয়ে অব্যাহত প্রতারণার শিকার হয়ে তারা এসব নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে, সরকারের নিজের দলের প্রার্থীই কেবল স্থানীয় সরকারের সদস্য নির্বাচিত হবেন। বাকিদের এ সুযোগ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করা হবে। সুতরাং এ ধরনের নির্বাচনে আগ্রহভরে অংশ নেয়ার কোনো অর্থ নেই। তবে আওয়ামী লীগের নিজেদের প্রার্থীদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সুযোগ রাখা হয়েছে। সাধারণত উচ্চমহল প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিক প্রার্থীকে পছন্দ করলে এই সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এই কোটায় জাতীয় পার্টির একজন ও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। আর রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এ ক্ষেত্রে নিজেদের দলীয় লোকেরা অন্ততপক্ষে প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছেন।
দু’টি জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি। ভোলা ও ফেনীতে চেয়ারম্যানসহ সব পদে একক প্রার্থী থাকায় আর ভোটের প্রয়োজন হয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ফেনী একটি ভিন্ন ধরনের মডেল সৃষ্টি করেছে। জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা ঠিক করে দেন, কোন পদে কে নিযুক্ত হবেন। বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে জেলাটিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে খুব সামান্য ক্ষেত্রে মানুষ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছে। এ মডেলটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ উৎসাহের সাথে অনুশীলন করেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন এই জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট। তারা গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের মতো রাজধানীর আগারগাঁও অফিসে বসে সিসিটিভিতে ভোট প্রত্যক্ষ করেছেন। কোনো ধরনের অনিয়ম সন্ত্রাস ভোটডাকাতি তারা দেখেননি। তাদের মতে, এটি ইভিএমে অনুষ্ঠিত একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।
খবরে জানা যাচ্ছে, বরিশালের মেয়র ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দায়িত্বে নিয়োজিত ইউএনওকে শাসিয়েছেন। দলবল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করার সময় ইউএনও তাকে শুধু নির্বাচন কমিশনের নিয়মটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তখন সরকারি ওই কর্মকর্তাকে কটাক্ষ করে কথা বলেন। জোর খাটিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া ইভিএম নিয়ে বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে নানা ধরনের অভিযোগ এসেছে। বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গেছে ত্রুটিপূর্ণ ইভিএম। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কেউ কেউ বলছেন, এটি ভোটচুরির মেশিন। নির্বাচন কমিশনের চোখে এগুলো না পড়লেও পুরো জাতি তা প্রত্যক্ষ করেছে।
বর্তমান সরকারের আমলে স্থানীয় সরকারের সদস্য নির্বাচন অর্থহীন হয়ে গেছে। কারণ এটি এখন কোনোভাবে স্থানীয় মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। এক অর্থহীন কাজ বারবার করে মানুষের দুঃখ ও বঞ্চনাকে বাড়ানো হচ্ছে। নির্বাচনের নামে এই প্রহসন আমাদের জাতীয় মর্যাদাকে দিন দিন উপহাসের বিষয় বানিয়ে দিচ্ছে। এই খেলা থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরত থাকা উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা