শিল্প খাত কঠিন পরিস্থিতিতে
- ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
অর্থনীতির মূল খাতগুলো ক্রমেই এলোমেলো হয়ে পড়ছে। ব্যাংক খাতের অবস্থা সবার জানা। রেমিট্যান্সের উৎস জনশক্তি রফতানির বেহাল দশা। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের বেশির ভাগ বৈধ চ্যানেলে আসছে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমেছে দফায় দফায়। এটি আরো কমবে। কৃচ্ছ্রতার নীতি গ্রহণের পরও রফতানির চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি। গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ রেখে এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতার কারণে জ্বালানি খাত বিপর্যস্ত। সরবরাহ লাইন না পাল্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদার দ্বিগুণ বাড়ানোর মতো ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার নীতির কারণে বিদ্যুৎ খাতে লেজেগোবরে অবস্থা। ১৪ বছরে বিদ্যুৎ খাতে লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও সেই বিদ্যুতের কারণেই এখন গোটা শিল্প খাত খাদের কিনারে।
বর্তমানে দেশের শিল্প-কারখানাগুলো গুরুতর সঙ্কটে রয়েছে। জ্বালানি তথা গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে এ অবস্থা। জ্বালানির অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক কারখানা উৎপাদন ঠিক রাখতে মূল্যবান জ্বালানি ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালাচ্ছে। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বিপুলভাবে বাড়ছে।
শিল্প উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, জ্বালানি সঙ্কটে কারখানাগুলোর উৎপাদন ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বন্ধ আছে। ফলে নানা ধরনের চক্রাকার বিরূপ প্রভাব পড়বে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো একসময় ব্যাংক ঋণ পরিশোধে অপারগ হবে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাবে। গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এরই মধ্যে বেশ কিছু শিল্প কারখানা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে অথবা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করে ব্যয় কমানোর তথা অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় দিনে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ডিজেল জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন ঠিক রাখতে গিয়ে বড় কারখানাগুলোর গড়ে প্রতিদিন বাড়তি ব্যয় হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এভাবে কতদিন উৎপাদন ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। আবার বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়ায় অনেক কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। গ্যাসনির্ভর শিল্পগুলো অনেক আগে থেকেই সঙ্কটে। টেক্সটাইল, সিরামিকসহ বিভিন্ন কারখানায় জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার হয়। সরকার গ্যাস দিতে পারে না। কারখানাগুলো ধুঁকছে। সরকারিভাবে গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগ দেয়া হয়নি। আমদানি করা গ্যাসের ওপর নির্ভর করার খেসারত দিতে হচ্ছে গ্যাসনির্ভর শিল্পকে।
এ দিকে বিদ্যুতের অভাবে শুধু দেশীয় নয়, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ বা ইপিজেডের কারখানাগুলোরও দুরবস্থা। ঢাকা ইপিজেডের একজন উদ্যোক্তা একটি দৈনিককে জানান, ইপিজেডে নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র দিনে দুই থেকে তিনবার ট্রিপ করে। এর ফলে উৎপাদন চালু রাখা মুশকিল হয়ে যায়। উৎপাদন কম হলেও অন্যান্য খরচ কমেনি; বরং বেড়েছে। সাথে যোগ হয়েছে বাড়তি ডিজেল খরচ। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উৎপাদন কমানোর বিকল্প নেই। স্বাভাবিকভাবেই, উৎপাদন কমিয়ে দিলে জনবলও কমবে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সবচেয়ে বড় খাত তৈরী পোশাকশিল্প। বৈদেশিক মুদ্রার ৬০ শতাংশেরও বেশি আয় করে এই খাত। জ্বালানি সঙ্কটে এই খাতটি দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে। তৈরী পোশাক খাতের বড় উদ্যোক্তা হা-মিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একটি দৈনিককে বলেন, দেশের স্পিনিং মিলগুলো ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়েও চালিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। স্পিনিং মিলগুলোর উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে বলে জানান আরেকজন উদ্যোক্তা। টেক্সটাইল মিলগুলোতে দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। সমস্যার আশু সমাধানের কোনো পথ আপাতত নেই। এ দিকে, উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে অনেক কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, এখন কারখানা বাঁচিয়ে রাখাই দায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা