২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
খাদ্য কেনার চাপে গরিব মানুষ দিশেহারা

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অপর্যাপ্ত

-

দেশের বেশির ভাগ মানুষ যে ভালো নেই, তা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। যেমন, গত রোববার একটি সহযোগী দৈনিকের খবর- দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ এখন খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। বাস্তবে সাম্প্রতিক সময়ে শুধু শহরাঞ্চলে নয়, দেশজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে বলা হয়েছে, দেশে খানাপিছু গড় মাসিক আয় ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ যায় খাদ্য কেনায়। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে মাসিক মোট আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে।
মানুষের ওপর এখন বড় আঘাত খাদ্যের চড়া দাম। খাবার কিনতে কেউ পরিবারের সম্পদ বিক্রি করছেন। কেউ ঋণ করছেন। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলো নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের চাপ সামলাতে পারছে না। এসব সমস্যা তাদের ভবিষ্যতের বড় সঙ্কট মোকাবেলার সামর্থ্য কমিয়ে দিচ্ছে। তবে ধনী ও সচ্ছল পরিবারগুলো খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য সমস্যায় তেমন কোনো অসুবিধায় পড়েনি।
দিন যত যাচ্ছে, অবস্থার যে কোনো ধরনের উন্নতি হচ্ছে না; বরং আরো অবনতি হচ্ছে- বিষয়টি সহজে অনুমেয়। এক জরিপ বলছে, নিম্ন আয়ের ৪২ শতাংশ পরিবারের জীবনযাত্রা ও খাদ্য পরিস্থিতির সব ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে। এ পরিস্থিতির জন্য মূলত খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ের মতো স্বাস্থ্যসমস্যা বেড়ে যাওয়া দায়ী। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক জরিপভিত্তিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ডব্লিউএফপির ‘বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা ও বিপন্নতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি করা হয়েছে এক হাজার ২০০ মানুষের ওপর জরিপের মাধ্যমে। গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে আটটি বিভাগের এসব মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
খাদ্যসঙ্কট মোকাবেলায় সরকার বেসরকারি খাতে চালের সরবরাহ বাড়াতে ও দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। বেসরকারি খাতের মাধ্যমে ১২ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে রাশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে গম এবং চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৫০ লাখ গরিব মানুষের জন্য বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার। সরকারের নেয়া এত সব উদ্যোগের পরও চাল ও গমের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি সবজি, ডিম, ডাল, মাছ, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদের দাম নিয়মিত বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যম আয়ের মানুষ খাদ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং আয় কমে যাওয়ায় নানাভাবে সাশ্রয়ের চেষ্টা করছে।
সরকারের দারিদ্র্যবিমোচন ও খাদ্য নিরাপত্তায় মূল কর্মসূচি হলো ‘সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম’। কিন্তু এ কার্যক্রম নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পগুলো পর্যাপ্ত এবং সার্বজনীন নয়। এসব প্রকল্পের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খণ্ডকালীন, মৌসুমি কিংবা দুর্যোগকালে বা দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে স্বল্প পরিসরে, যা সারা বছর সুরক্ষা প্রদানে কার্যকর নয়। কারণ, দেশে আগে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৪২ লাখ। করোনার অভিঘাতে নতুন করে আরো আড়াই কোটির মতো দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। সব মিলিয়ে দেশে এখন প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ দরিদ্র। এত বিপুল গরিবের জন্য সরকারের নেয়া সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি অপর্যাপ্ত। তাই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে নতুন দরিদ্রদের অন্তর্ভুক্ত করে এবং এসব কর্মসূচিতে আর্থিক ও খাদ্যপণ্যের বরাদ্দ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।


আরো সংবাদ



premium cement