২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
উদ্যোক্তারা দুর্নীতির শিকার

প্রতিকার মিলছে না

-

ছোট ছোট উদ্যোগ একটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ। এমন সফল উদ্যোক্তার সংখ্যা যত বেশি হবে দেশের অর্থনীতি তত সবল হবে। বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তত বেশি সক্ষম হবে দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণে আমাদের অর্থনীতি যেভাবে ধরাশায়ী হয়েছে এর মূল কারণ টেকসই উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে না ওঠা। উদ্যোক্তাদের বিকাশের পথ করে দেয়া সরকারের কাজ । সে জন্য দরকার অনুকূল নীতি ও সেই নীতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া। এ ধরনের কিছু আমাদের দেশে হয়নি। ফলে দেশের অর্থনীতি অল্পতে টলে যাচ্ছে। এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতির কারণে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই) নামের দু’টি বেসরকারি সংস্থা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে এই জরিপ করেছে। তারা ৮০০ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার ওপর জরিপ চালায়। এর মধ্যে ৪০০ জন উৎপাদন খাত ও ৪০০ জন সেবা খাতের। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের ৫২ দশমিক ০৬ শতাংশ জানিয়েছেন, লাইসেন্স তৈরি ও নবায়ন, টিন ও ভ্যাট সনদ সংগ্রহসহ সব ধরনের সরকারি সেবা গ্রহণ কিংবা ব্যবহারের জন্য ঘুষ দিতে হয়। ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ বিশ্বাস করেন, প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে দুর্নীতির শিকড় গভীরে প্রোথিত। ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করেন, দুর্নীতির উপস্থিতি বাজারকে অসম প্রতিযোগিতায় ফেলেছে। অর্ধেকের বেশি অংশগ্রহণকারী মনে করেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে সরকারের কঠোর নিয়ম-কানুন প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতি বৃদ্ধির উপলক্ষ হচ্ছে।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সর্বাধিক ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ দুর্নীতি হয় উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে। ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ বলছেন, চাঁদাবাজির মাধ্যমে দুর্নীতি হচ্ছে, টেবিলে ফাইল আটকে রেখে কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ কাজটি হচ্ছে। ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ বলছেন, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দুর্নীতি হচ্ছে। ৬০ দশমিক ১ শতাংশ বলছেন, দুর্নীতি হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাবে। যদিও দুর্নীতির প্রত্যেকটি ক্ষেত্রের সাথে রাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে। দুর্নীতিবাজরা আগে দলীয় সম্পর্ক সৃষ্টি করে। সরকার পরিবর্তন হলে একই দুর্নীতিবাজ ভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক করে নিয়ে দুর্নীতির আগের ধারা অব্যাহত রাখে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া হয়। এ জন্য সরকারের আলাদা বিভাগ রয়েছে। জরিপে উঠে এসেছে, এগুলো সেভাবে কোনো কাজে আসছে না। জরিপে অংশ নেয়া উদ্যোক্তাদের ৮৬ দশমিক ২ শতাংশ বলছেন, দুর্নীতিবিরোধী আইনের অনিয়মিত প্রয়োগ হচ্ছে, ৭৯ দশমিক ৫ শতাংশ বলছেন, একেবারেই প্রয়োগ হচ্ছে না। ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ জানাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্বের অভাবের কথা। জরিপে জানা যাচ্ছে, অন্যায় অনিয়মের শিকার হয়েও মাত্র ৩ শতাংশ উদ্যোক্তা অভিযোগ করেছেন। আরো বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, অভিযোগকারীরা কোনোরকম প্রতিকার পাননি বরং ৭০ শতাংশ নেতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন অর্থাৎ তিরস্কৃত হয়েছেন।
ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করে দেশের ব্যবস্থাকে পাল্টে দেবেন সেই ধরনের ইতিবাচক অবস্থা আমাদের দেশে নেই। সরকার উদ্যোক্তাদের আর্থিক ও নীতি সহায়তার নামে বহু প্রকল্প গ্রহণ করলেও বাস্তবে তারা পদে পদে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। মূলত দেশে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। যদিও সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতির কথা বলছে। সুতরাং কথা এবং কাজে মিল না থাকার খেসারত দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা ও দেশবাসী। অবস্থার পরিবর্তনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার; কিন্তু তা অনুপস্থিত।


আরো সংবাদ



premium cement