জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি
- ১৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
ইদানীং গণপরিবহনের নির্গত কালো ধোঁয়ায় ঢাকা শহরে জোরে শ্বাস নেয়া যায় না, ফুসফুসে আটকে যায়। রাজধানীর বাতাসে এত ভারী ধাতু রয়েছে যে, জোরে শ্বাস নিলে কষ্ট হয়। কালো ধোঁয়ায় যে শুধু শ্বাসকষ্ট হয় তা নয়- কালো ধোঁয়ার মধ্যে থাকা ধাতু দীর্ঘ দিন পরিবেশে থেকে যায়। এতে ঢাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে, রাজধানী শহর হয়ে উঠছে বিশ্বের অবাসযোগ্য নগরীগুলোর একটি।
কালো ধোঁয়ার সাথে বেশ কয়েক ধরনের কণা, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সিসাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান নির্গত হয়। এগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। ধোঁয়ায় থাকা কিছু ভারী ধাতু অক্সাইড ফুসফুস, হার্ট ও কিডনিকে অকেজো করে দিতে পারে। এতে করে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে স্ট্রোক, হার্ট, কিডনি জটিলতার রোগী বেড়ে গেছে। এসব জটিলতায় বাতাসে থাকা ভারী ধাতুও দায়ী।
ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর করে তোলার অন্যতম কারণ- এ নগরীতে চলাচল করে এমন অর্ধেকের মতো গণপরিবহন ও প্রায় সব ধরনের ট্রাক থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হওয়া। এমনকি কিছু ফোর স্ট্রোক মোটরসাইকেলেও কালো ধোঁয়া বের হয়। এর সাথে রয়েছে রাজধানীর আশপাশের ইটভাটা ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া। অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজের জন্যও রাজধানীর বাতাস অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। দিন দিন তা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
সাধারণত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যানবাহনে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। গাড়ি থেকে কেন কালো ধোঁয়া বের হয়? গাড়ির ইঞ্জিন চলে জ্বালানি তেলে। সেই তেল পোড়াতে অক্সিজেন লাগে। জ্বালানির সাথে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকলে তা ঠিকমতো পোড়ে না। তখন আধপোড়া কিংবা অব্যবহৃত জ্বালানি বের হয়ে আসে, মিশে যায় বাতাসে। গাড়ির কালো ধোঁয়ায় বেশি পরিমাণে কার্বন ও আধপোড়া জ্বালানি থাকে। গাড়ি থেকে অনেকসময় ধূসর ধোঁয়া বের হয়ে আসে। এ ধূসর ধোঁয়া বের হয় ইঞ্জিনঅয়েল বা লুব্রিকেন্ট বের হয়ে এলে। আবার অনেকসময় কিছু মোটরসাইকেল অথবা টেম্পো-জাতীয় হিউম্যান হলার ডিজেলের সাথে ইঞ্জিন অয়েল মেশায় জ্বালানি কম পোড়ার জন্য। জ্বালানির সাথে ইঞ্জিন অয়েল মেশালে প্রচুর ধোঁয়া বেরিয়ে আসে। কালো ধোঁয়া বের হয়ে আসে বেশি মালামাল বহন করলে, বাল্ব টাইমিং সঠিক না হলে, কম্প্রেসারের চাপ কম হলে। ইনজেকটর ত্রুটিযুক্ত হলে কালো ধোঁয়া বের হবে। পিস্টন রিং ও লাইনার ক্ষয়প্রাপ্ত হলেও কালো ধোঁয়া বের হয়।
বাস্তবতা হলো- যান্ত্রিক ত্রুটি সত্ত্বেও চালকরা ওই সব যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহন মাসের পর মাস নির্বিকারে চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাদের কোনো ভাবান্তর নেই। গণপরিবহনের চালকদের বক্তব্য- ইঞ্জিন দেখা তাদের কাজ নয়, তাদের কাজ গাড়ি চালানো। মালিক ঠিক করে না দিলে তাদের কী করার আছে।
সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ায় যাত্রীবাহী বাসে জ্বালানি হিসেবে সিএনজির ব্যবহার আগের চেয়ে কমে গেছে। শুধু যাত্রীবাহী বাস নয়, ট্রাকেও সিএনজি ব্যবহারে আগ্রহ দেখা যায় না। ফলে ডিজেলের গণপরিবহনগুলো চালানোর কারণে ত্রুটিযুক্ত যানবাহনে এখন বেশি বেশি কালো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। ফলে ঢাকার জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়েছে; কিন্তু এ অবস্থার উন্নতি করতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতো আমরাও মনে করি, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে রাজধানীতে ত্রুটিযুক্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। এ জন্য বিআরটিএ’র উদ্যোগ নিতে হবে। সাথে সাথে ঢাকার ট্রাফিক পুলিশ বিভাগকে তৎপর করতে হবে। এতে রাজধানীতে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল কমবে বলে আশা করা যায়। তখন কালো ধোঁয়া নির্গত হওয়াও কমে আসবে। আর এর প্রভাবে ঢাকার বাতাস এখনকার চেয়ে স্বাস্থ্যকর হবে। ফলে জনস্বাস্থ্য আগের চেয়ে একটু হলেও ভালো হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা