২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সারা দেশে অনলাইন জুয়ার প্রসার

তরুণদের আসক্তি উদ্বেগজনক

-

প্রাচীনকাল থেকে জুয়া যে কত সর্বনাশা তা গ্রামীণ জনপদের লোককথায় জানা যায়। স্থানীয়ভাবে এলাকায় এলাকায় জুয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা লোকমুখে এখনো শোনা যায়। নিঃসন্দেহে জুয়া একটি ঘৃণ্য কাজ। সময়ের আবর্তে জুয়াতেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে জুয়া প্রযুক্তির ওপর ভর করেছে। অর্থাৎ অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় ব্যাপকভাবে এর জাল বিস্তার করেছে। এতে আমাদের সমাজের বিপুলসংখ্যক মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের সর্বস্বান্ত করে কিছু ব্যক্তি এর ষোলোআনা ফায়দা তুলছে নিজেদের ঝুলিতে।
কিছু দিন আগে অনলাইন জুয়ায় সর্বস্ব হারানো একজন ব্যাংক কর্মকর্তার ব্যাংক থেকে টাকা চুরির ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষও বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা এতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। খোয়াচ্ছে বিপুল অর্থ। অনেকে ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ছে। খেটে খাওয়া মানুষ দিনের উপার্জনের পুরোটাই হারাচ্ছে অনলাইন জুয়ায়। ফলে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অনলাইন জুয়া। একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
মূলত ২০১৬ সাল থেকে ক্রিকেট ঘিরে বাংলাদেশে অনলাইনে জুয়ার প্রসার বাড়তে থাকে। তখন কিছু যুবক খেলার ওয়েবসাইট খুলে মানুষকে যুক্ত করে বেটিংয়ে অংশ নিতে আহ্বান জানায়। পরবর্তীকালে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাইট থেকে ব্যবহারকারীদের অ্যাপে স্থানান্তর করা হয়। অথচ বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, বেটিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক লেনদেন কেউ করলে সেটি অর্থ পাচারের মধ্যে পড়ে।
মোবাইল অ্যাপ ছাড়াও অপরাধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ডোমেইনের মাধ্যমে সরাসরি অনলাইন গেম বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। এ জন্য দেশে ও বিদেশে হোস্টকৃত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলে নিবন্ধন করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য কার্ড বা অন্য কোনো মাধ্যমে জমা দিয়ে জুয়ায় অংশ নিতে হয়। অনলাইন জুয়াড়িরা বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা নেয়। প্রকাশ্যে এর হার কমলেও অনলাইনে এ খেলার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এতে আসক্ত হচ্ছে তরুণ-তরুণীরা। নিঃস্ব হচ্ছে হাজারো মানুষ ও তাদের পরিবার।
ফেসবুক আইডি, পেজ, গ্রুপ, ওয়েবসাইট ও মোবাইলভিত্তিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপ দিয়ে চলছে জুয়ার সাইট। এতদিন বিদেশী আয়োজনে এসব সাইট চললেও এখন দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি ৩৩১টি জুয়ার সাইট বন্ধ করেছে। বিটিআরসি বলছে, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড সহজলভ্য হওয়ায় অনেকে ঝুঁকে পড়েছে অনলাইন জুয়ায়। এ সুযোগে অপরাধী চক্র বিদেশে পাচার করছে কোটি কোটি টাকা।
সম্প্রতি সিআইডির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, শুধু ‘বিগো লাইভ’ নামে সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি অ্যাপের মাধ্যমে আপত্তিকর কনটেন্ট ছড়িয়ে দুই কোটি বাংলাদেশী ব্যবহারকারীর কাছে থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। সিআইডি বলছে, ২০ মাসে হাতিয়ে নিয়েছে ১০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৯ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে তোলা হয়েছে আরো ১৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশের দু’টি ব্যাংকে থাকা অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। ওই দু’টি অ্যাকাউন্টে ২৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা জমা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, যেহেতু সরকারি সংস্থা বিটিআরসি হচ্ছে আইটি বিষয়ে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। তাই দেশে অনলাইন জুয়া বন্ধ করতে প্রতিষ্ঠানটির নজরদারি ও তৎপরতা বাড়াতে হবে। যাতে দেশী-বিদেশী কোনো চক্র অনলাইন জুয়ার মতো ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড অবাধে চালিয়ে যেতে না পারে। একই সাথে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে যারা এর সাথে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা। তখনই কেবল সম্ভব দেশে অনলাইন জুয়ার প্রসার ঠেকানো। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়লে কর্মবিমুখ হয়ে তারা আমাদের বোঝা হয়ে পড়বে। এটি জাতীয় জীবনে বয়ে আনবে অভিশাপ।


আরো সংবাদ



premium cement