২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
৯০ শতাংশই এনজিওর ঋণগ্রস্ত

ব্যাংকগুলোর অনিয়ম ব্যাপক

-

এনজিওর ঋণে জর্জরিত মিঠাপুকুর উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দা। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের ৯টি ইউনিয়ন যমুনেশ্বরী, আখির ও ঘাঘট নদীর ভাঙন ও বন্যাকবলিত চরাঞ্চল। রংপুরের এ উপজেলার ৩১০টি গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। এখানে ছোট-বড় এনজিওসহ বিভিন্ন সমিতির নামে ঋণ ব্যবসা করছে অর্ধশতাধিক সংস্থা। নয়া দিগন্তের মিঠাপুকুর প্রতিনিধির পাঠানো এক প্রতিবেদনের সূচনাংশ এটি।
সেখানে আরো জানানো হয়েছে, সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার ৯০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এনজিওর ঋণের জালে ইতোমধ্যে জড়িয়ে গেছে। জানা গেছে, ব্র্যাক ফকিরহাট ও বালুয়া শাখা ২৯২টি সমিতির বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ৬৫ হাজার ৭২৩ জন তিন কোটি ৮২ লাখ দুই হাজার ৯৭৩ টাকা ঋণ নিয়েছেন। প্রশিকা মিঠাপুকুর শাখা থেকে ৬২২টি সমিতির মাধ্যমে ১০ হাজার ২৩৬ জন মানুষ ঋণ নিয়েছেন পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ দুই হাজার ৪৯ টাকা। সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিসেস (এসএসএস) থেকে এক হাজার ৭৯৮ জন ঋণ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮২৫ টাকা। তা ছাড়া আশা, গ্রামীণব্যাংক, পল্লী দারিদ্র্য মোচন ফাউন্ডেশন, উন্নয়ন সংঘসহ ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেয়েছে লক্ষাধিক মানুষ, যার পরিমাণ ১০ কোটি টাকার অধিক। সকাল না হতেই ঋণের কিস্তির জন্য গ্রহীতার বাড়িতে গিয়ে হাজির হচ্ছেন এনজিওর লোকেরা। অথচ তাদের দেখলেই চমকে ওঠেন নদীভাঙন ও বন্যাকবলিত গরিব লোকজন। বিভিন্ন এনজিওর ঋণের অর্থ শোধ করতে করতে তারা আজ দিশাহারা। একসাথে একাধিক এনজিওর ঋণগ্রস্ত বহু পরিবার কেবল অন্ধকার দেখছে। কারণ একটার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না করতেই অন্যটির কিস্তির টাকা সংগ্রহ করতে হয় তাদের। ফলে তাদের দাদন ব্যবসার কাছে দ্বারস্থ হওয়ার বিকল্প থাকে না। এই মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ কিংবা কম মূল্যে আগাম ফসল বেচে নিয়ে এনজিওকে কিস্তি শোধ করতে হয়। এ দিকে ঋণ তো কমেই না, দিন দিন তা বাড়তেই থাকে। এক ঋণ থেকে রক্ষা পেতে অন্য ঋণের জালে আটকা পড়তে হয়। কিস্তি শোধ করার জন্য গৃহবধূর সোনার অলঙ্কার, হালের বলদ, ছাগল, এমনকি হাঁস-মুরগি বিক্রি করেও পার পাওয়া যায় না। শেষ পর্যন্ত অনেকে বাধ্য হয়ে বসতভিটা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। অনেকে ঋণ নিয়ে মামলার আসামি হচ্ছেন। বন্যা, ভাঙন, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি করা সত্ত্বেও এনজিওর হাত থেকে রেহাই মিলছে না। উল্লেখ্য যমুনেশ্বরী, ঘাঘট নদীর ভাঙনে বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাই হাজার হাজার পরিবার বর্তমানে নিঃসম্বল। তারা ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ পান না। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের চড়া সুদে ঋণ নিতে হয় এনজিও থেকে। মিঠাপুকুর উপজেলায় আয়ের সর্বপ্রধান উৎস কৃষিকাজ। কিন্তু সব কিছু ভাঙনগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় অধিবাসীরা এখন ভূমিহীন। তবে এনজিওর ঋণের জালে বন্দী হয়ে তারা অবনতির দিকেই অগ্রসর হয়েছেন। এনজিওর ঋণের চাপে এখন সমবায় সমিতির নামে এবং দাদন কারবারিদের ব্যবসাও এলাকায় জমজমাট। অপর দিকে ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা থাকলেও নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির দরুন আসল কৃষকরা সাধারণত ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ পাচ্ছেন না। ব্যাংক থেকে ঋণ না পেয়ে তাদের এনজিও এবং দাদন ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাদের মাসে মাসে শতকরা ১০-২০ টাকা ‘লাভ’ দিতে হচ্ছে। এটা চড়া সুদের নমুনা। এনজিওদের নিয়ম হলো, ঋণের অর্থে উৎপাদন আয় থেকে গৃহীতাদের কিস্তি দেয়ার কথা; কিন্তু কার্যত ঋণ নেয়ার পরের সপ্তাহ থেকেই ঋণের কিস্তি শোধ করতে হয়। কোনো কারণে কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে ঋণগ্রহীতার বাড়িতে এনজিওর কর্মীরা দলবল নিয়ে হুমকি দেয়াসহ মামলায় জড়িয়ে পুলিশি হয়রানির ভয় দেখান। ফলে অনেককে এমনকি জেলে যেতে হয়েছে।
ব্যাংক ব্যবস্থার আমূল সংস্কারভিন্ন উপায় নেই। এনজিও যাতে বাংলাদেশে শোষণ করতে না পারে, সে জন্য ব্যাংকের যাবতীয় অনিয়ম ও দুর্নীতি আগে দূর করা খুবই দরকার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিগগিরই সক্রিয় হবে বলে আমরা আশাবাদী।


আরো সংবাদ



premium cement
বিপুল পরিমাণে বিদেশী মুদ্রাসহ শাহ আমানতে যাত্রী আটক রাখাইনে গণহত্যা ও চলমান সহিংসতার বিচারের দাবি রোহিঙ্গাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৪র্থ বর্ষের সমন্বিত ফলাফল প্রকাশ রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির কুলাউড়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি অহিংস গণঅভ্যুত্থানের আহ্বায়কসহ ১৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দায় ন্যাশনাল হাসপাতালের ওপর চাপানো ভিত্তিহীন : কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল বন্ধ ঘোষণা স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে পিরোজপুরে একজনের যাবজ্জীবন নড়াইলে ২ ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নোবিপ্রবিতে মানবিকতার আড়ালে হচ্ছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ পুনর্বাসন

সকল