২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সভা-সমাবেশে হামলা নয়

গণতন্ত্রের পথ মসৃণ হোক

-

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্র্রে সভা-সমাবেশ করার অধিকার স্বীকৃত। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার শঙ্কা না থাকলে কারো অনুমতিরও প্রয়োজন নেই। বর্তমান সরকারের সময় পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। সভা-সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি নিতে হচ্ছে। অনুমতি পাওয়া অনেকটাই সরকারি কর্তৃপক্ষের দয়ার ওপর নির্ভর করছে। যেকোনো ধরনের কারণ দেখিয়ে রাজনৈতিক দলকে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এখন কিছুটা শিথিল হতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের কিছু সুযোগ বর্তমানে বিরোধীরা পাচ্ছেন; কিন্তু এসব কর্মসূচিতে সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন হামলা করছে। কোথাও পুলিশ নিজে আক্রমণ চালিয়ে এগুলো পণ্ড করে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সারা দেশের মানুষ এমনকি সহযোগী বন্ধুপ্রতিম দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কিছু ক্ষেত্রে সরকারি দলের পক্ষ এমন অগ্রহণযোগ্য আচরণ করছে, যা কোনো ধরনের শোভন মাত্রার মধ্যে পড়ে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি স্মরণসভায় আক্রমণ চালায় সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। আয়োজক গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রদের বেধড়ক মারধর করে। আহত ছাত্ররা হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে তারা আরেক দফা হামলা চালায়। এ হামলায় আহত ছাত্র ও তাদের দেখতে আসা শুভাকাক্সক্ষীদের কেউ রেহাই পাননি। ঘটনা এখানে শেষ হয়ে যায়নি। এই ছাত্রদের ওপর চড়াও হয় পুলিশও। তাদের ধরে নিয়ে যায়। উল্টো মামলা করে ছাত্রলীগ। সেই মামলায় তাদের আটক করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর আগে কয়েক দফায় বিরোধী ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের সমন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত সরকার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমান সরকারের শাসনামলে সারা দেশে একই চিত্র দেখা গেছে। বিএনপির সভা-সমাবেশে সরকারি দল ও পুলিশ সম্মিলিত হামলা করছে। কোথাও পৃথকভাবেও তারা হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের গুলিতে তারা প্রাণ হারাচ্ছেন। এখনকার সময়ের সাথে বর্তমান শাসনামলের অন্য সময়ে পার্থক্য হচ্ছে এখন বিরোধীরা সব বাধা ডিঙিয়ে জানের মায়া ত্যাগ করে রাস্তায় নামছেন।
এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বিরোধীদের সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বিরোধী রাজনৈতিক সমর্থকদের সংগঠিত ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সরকার বিরোধীদের গণগ্রেফতার ও তাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে ২০২৩ সালে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের গুরুতর উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিবৃতিতে তারা গুরুত্বের সাথে সামনে এনেছে হামলা ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় তদন্ত না হওয়া ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি জারি থাকার বিষয়। তারা বলেছে, হামলাকারী আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থকদের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিরোধীদের ওপর সরকারি দলের হামলা পুলিশি সাঁড়াশি কর্মকাণ্ডের মধ্যেও গণতান্ত্রিক পরিবেশের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে দেশের অবস্থা এ সরকারের আমলে আরো নাজুক ছিল। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানানো ছিল দূরের বিষয়; সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সরকারি সংস্থার অন্যায় কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করা ছিল দুরূহ। এখন সরকারি দলের হয়ে যারা মানুষকে দমাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিরোধীদের ওপর আক্রমণ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ অপরাধীদের বিচার না হওয়া। সরকার চাইলে এখন তাদের বিচারের আওতায় আনতে পারে। এতে গণতান্ত্রিক পরিবেশের উন্নতি হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পথ মসৃণ হবে। সরকারও বেঁচে যাবে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরার অভিযোগ থেকে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল