কর্তৃপক্ষের নজর নেই!
- ১২ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গবাদিপশুসমৃদ্ধ পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে দুধের চাহিদা আগের মতোই আছে, তবে সরবরাহ এখন কমে গেছে। এ সুযোগে একশ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ী নকল দুধ ও ঘি বানিয়ে বাজারজাত করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভেজালবিরোধী অভিযানেও কমছে না তাদের নকল ঘি ও দুধের কারবার। ভেজাল দুধ বানানো হচ্ছে ক্ষতিকর ছানার পানি, স্কিমড মিল্ক, ডিটারজেন্ট পাউডার প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে। নকল ঘি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় দুধের ননি বা ফ্যাট, বাটার অয়েল সয়াবিন ও কালার ফ্লেভার। আর দুধ তাজা রাখতে ব্যবহার করা হয় বহুলালোচিত ফরমালিন। মানুষ এমন দুধ ও ঘি কিনে ঠকছে। আর কিছু অসাধু লোক তা বিক্রির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
জানা যায়, বেড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সম্প্রতি এ উপজেলার এক গ্রামে অভিযান চালিয়ে বিপুল নকল দুধ ও এর উপকরণ আটক করেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত সংশ্লিষ্ট গোয়ালাকে দেড় বছর জেলসহ এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, পাবনার বেড়া, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর ও চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলার শতাধিক ব্যবসায়ী ও গোয়ালা নকল দুধ তৈরি করছেন। তাদের অনেকে আবার নকল ঘিও বানাচ্ছেন। নকল দুধ তৈরি করতে প্রথমে খাঁটি দুধের সব ননি তুলে নেয়া হয়। পরে ননিহীন দুধে সয়াবিন তেল ও ডিটারজেন্ট পাউডারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে নকল দুধ বানানো হয়। পাবনা ও সিরাজগঞ্জে শতাধিক কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ১১ হাজার ২০০ কেজি বা ২৮০ মণ ছানা তৈরি করা হয়। এই ছানার জন্য এক হাজার ৪০০ মণ দুধ প্রয়োজন। অসৎ লোকেরা ছানার পানি ফেলে না দিয়ে তা বড় বড় ড্রামে ধরে রাখে। পরে তার সাথে কেমিক্যাল মিশিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি করা হয়ে থাকে। একেকটি কারখানাতে ৫০০ থেকে দুুই হাজার লিটার করে ছানার পানি মজুদ করে রাখা হয়। এটাই ভেজাল দুধের মূল উপাদান।
সাধারণত ঘি তৈরি করা হয় গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগলের দুধের ফ্যাট বা ননি দিয়ে। এখন অনেকে এর সাথে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ভেজাল ঘি বানাচ্ছে। তা বাজারে বিক্রিও হচ্ছে। জানা গেছে, ১৫ কেজি ডালডা অথবা ভেজিটেবল অয়েল মাত্র, পাঁচ কেজি ননি ও এর সাথে কালার ফ্লেভার দিয়ে জ্বাল দেয়ার মাধ্যমে ভেজাল ঘি তৈরি হয়। এই ঘি ‘বাঘাবাড়ীর খাঁটি গাওয়া ঘি’রূপে ঢাকা-চাটগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত ও বিক্রি হচ্ছে।
জানা যায়, বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলের শতাধিক ছানা কারখানায় উচ্ছিষ্ট ছানার পানি নকল দুধ তৈরির প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক মণ ছানার পানিতে আধা কেজি ননি, আধা কেজি পাউডার দুধ, সামান্য লবণ, খাওয়ার সোডা, এক কেজি চিনি ও দুধের কৃত্রিম সুগন্ধি মিশিয়ে অবিকল ‘দুধ’ বানানো হয়। রাসায়নিক পরীক্ষা ব্যতীত তা বোঝার কোনো উপায় নেই। দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই ভেজাল দুধ সংগ্রহ করছে। প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় ভেজাল দুধের সাথে আসলটা মিশিয়ে সব দুধই আসলে ভেজাল বানানো হচ্ছে। তখন আসল দুধের বেশির ভাগ ননি বের করা হয়ে থাকে। এতে দুধের পুষ্টিমান কমে যায়। তাই দুধ কিনে মানুষকে ঠকতে হচ্ছে। দুধের ল্যাক্টো ও ঘনত্ব নির্ণয়ে ল্যাক্টোমিটার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ কারণে ভেজাল দুধে চিনি, লবণ, হাইড্রোজ, সয়াবিন তেল ব্যবহৃত হয়। ফলে দুধের ল্যাক্টো ও ঘনত্ব বেড়ে যায় দৃশ্যত। জানা যায়, তাজা দুধের জন্য ফরমালিন দেয়া হয়। তাই ভেজালবিরোধী অভিযানেও ভেজাল ধরা পড়ছে না। কিছু লোকের যোগসাজশের দরুন অসৎ ব্যবসায়ীরা আগেই কর্তৃপক্ষের অভিযানের খবর পায়। তবে পাবনার বেড়ার ইউএনও বলেছেন, ‘শিশুর মানসিক বিকাশসহ মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নকল দুধের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সজাগ সর্বদাই। খবর পেলে আমরা অভিযানে নামি আর প্রমাণ পেলে দোষীদের শাস্তি হবেই।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা