২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
করোনা-উত্তর শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ

অভিভাবকের সচেতনতা দরকার

-

মহামারী করোনা নানাভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। এর অভিঘাত সমাজজীবনে তীব্র। করোনার আঘাত শিক্ষার্থীদের জীবনের ভয়ানক ক্ষতি করেছে, যা এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। অথচ সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কার্যকর পরিকল্পনার বড় অভাব। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মানসিক নানা চাপ থেকে বের করে আনার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
গত শনিবার প্রকাশিত বেসরকারি একটি সংস্থার জরিপের তথ্য মতে, দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনা-পরবর্তী অ্যাকাডেমিক চাপে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। দীর্ঘ বিরতির ফলে সৃষ্ট সেশন জট, পড়ালেখায় অনীহা, পরীক্ষার ফল নিয়ে হতাশাসহ বিভিন্ন কারণ এ জন্য দায়ী। জরিপে বলা হয়, ৪৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর করোনার আগের তুলনায় পড়ালেখায় মনোযোগ কমে গেছে। ঘন ঘন পরীক্ষা হওয়ায় তাতে খাপ খাওয়াতে পারছেন না ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ।
বেসরকারি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন পরিচালিত করোনা-পরবর্তী আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক ওই জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। এক হাজার ৬৪০ শিক্ষার্থী জরিপে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছাত্র এবং ছাত্রী যথাক্রমে ৪৩ দশমিক ৯ ও ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ। জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। ২ দশমিক ২৬ শতাংশ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত।
জরিপে অংশ নেয়াদের ৫৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ জানিয়েছেন, নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগ তাদের জীবন প্রভাবিত করছে। ৮০ দশমিক ৭৯ শতাংশের মন খারাপ হওয়া, হঠাৎ ক্লান্তি বোধ করার মতো নানা সমস্যা শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলছে। মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যবহারের আসক্তি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ৭০ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর ওপর। অতিরিক্ত ঘুম ও নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন ৭১ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৪৭ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেছে বা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। করোনা-পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থায় অতিরিক্ত পড়ালেখার চাপে আছেন ৭৭ দশমিক ০১ শতাংশ শিক্ষার্থী।
দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন আসায় ৭৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। ৭৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী চাকরির ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় মানসিক চাপে আছেন। এর মধ্যে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় সংখ্যায় বেশি ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত। পরীক্ষায় ভালো ফল না হওয়ার ভয়ে আছেন ৭৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ৭৪ দশমিক ৫১ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা নিজেদের মানসিক সমস্যাগুলো বলার শিক্ষক পান না। ৫৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, পড়ালেখায় তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিবেশ সহায়ক নয়। ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পারিবারিক অর্থনৈতিক চাপে আছেন। ভালো চাকরি না পাওয়ার চাপে আছেন ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া বিয়ে নিয়ে অযাচিত চাপ ও পারিবারিক ঝগড়ায় চাপে আছেন ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
৩০ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা আত্মহত্যার ঝুঁকিতে আছেন। করোনা-পরবর্তী সময়ে জরিপে অংশ নেয়া এক হাজার ৬৪০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জন বা ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছেন ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ সময় আত্মহত্যা করার কথা মাথায় আসে ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশের।
যদিও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির জরিপ ব্যাপকভাবে পরিচালিত নয়। তবু এর তথ্য-উপাত্ত নমুনা হিসেবে নেয়া অযৌক্তিক নয়। করোনা যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের গুরুতর ক্ষতি করেছে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই শিক্ষা খাতে করোনার অভিঘাত নিরূপণে সরকারিভাবে সার্বিক জরিপ করা সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ওপর মনোজাগতিক যে প্রভাব পড়েছে সে দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে শিক্ষার্থীদের মনোজাগতিক ক্ষতির ব্যাপারে অভিভাবকদের সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
গণমাধ্যমে হামলা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব : তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ গণমাধ্যমের ওপর হামলা সহ্য করা হবে না : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জাপানে রকেট পরীক্ষাস্থলে ভয়াবহ আগুন সিলেটে ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটক ৩ আদানির সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি : হাইকোর্টের লিখিত আদেশ প্রকাশ কুমিল্লা সীমান্তে মাদকসহ ভারতীয় নাগরিক আটক এশিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে রাশিয়ার পাল্টা হুমকি ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তানে নিহত আরো ৬, সেনা মোতায়েন রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ বিয়ের প্রলোভনে আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ

সকল