সতর্ক পদক্ষেপ নিন
- ০৮ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে কিছুটা মন্দাভাব দেখা দেয়ায় দেশে দেশে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে। এমন বাস্তবতায় আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ অর্থনীতির বেহালদশায়। বিশ্বব্যাংকের মতে, চলতি বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি হবে রেকর্ড পরিমাণ। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এ অঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তা আরো ঝুঁকিতে ফেলেছে। এ অবস্থায় চলতি বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২ শতাংশ ছাড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
মূল্যস্ফীতি মানুষের প্রকৃত আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর প্রভাবে এ অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরো বিপাকে পড়বে। কারণ, এ অঞ্চলের মানুষ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ খাদ্যের জন্য ব্যয় করেন। বাংলাদেশেও মুদ্রাস্ফীতি আগের চেয়ে বেড়েছে। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছেন না। বাস্তবে দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনমান সাম্প্রতিক সময়ে তলানিতে। প্রকৃতপক্ষে মুষ্টিমেয় ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ছাড়া দেশের বেশির ভাগ নাগরিকের জীবন চালানো দায় হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি আগামীতে আরো অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্বব্যাংকের এক পূর্বাভাস বলছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনীতিতে নজিরবিহীন ধাক্কা, বাড়িয়ে দিচ্ছে চ্যালেঞ্জ এবং প্রবৃদ্ধি কমছে শীর্ষক এক প্রবন্ধে এ পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার বলেছেন- মহামারী, বিশ্বব্যাপী তারল্য, পণ্যের দামের আকস্মিক পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়া বিপর্যয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ধাক্কা সামলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে শক্তিশালী অর্থনীতি এবং আর্থিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে হবে। নিজ দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হলে দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়ন করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। যা গত জুনের প্রাক্কলন থেকে ১ শতাংশ কম। অর্থনৈতিক মন্দা এখন দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে ভারসাম্যহীন করছে। প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কোভিড-১৯-এর সম্মিলিত প্রভাব এবং পণ্যের রেকর্ড-উচ্চমূল্য শ্রীলঙ্কার অনেক বেশি ক্ষতি করেছে। দেশটির ঋণের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে, ফলে বৈদেশিক রিজার্ভ কমে গেছে। এ অবস্থায় সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়া শ্রীলঙ্কার প্রকৃত জিডিপি এ বছর ৯ দশমিক ২ শতাংশ কমে যাবে। ২০২৩ সালে এটি আরো ৪ দশমিক ২ শতাংশ কমতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। একই অবস্থা পাকিস্তানেরও।
অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ দ্রব্যমূল্য আমাদের বাহ্যিক ভারসাম্যহীনতা আরো প্রকট করেছে। রিজার্ভ কমিয়ে আনছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি অনিশ্চয়তায় পড়েছে। এ অবস্থায় দেশে করোনাপূর্ব অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৪২ লাখ। এখন নতুন করে আরো আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে। আগের এবং বর্তমানের মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ কোটি দরিদ্র মানুষের বসবাস। এদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা আরো ঝুঁকিতে পড়েছে তাদের আয় কমে যাওয়ায়। যার প্রভাবে আমাদের সামগ্রিক খাদ্যনিরাপত্তা আরো দুর্বল হবে এটিই স্বাভাবিক।
এমন বাস্তবতায় দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে সরকারকে এখনই সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে বর্তমান সরকারের জবাবদিহির যে নমুনা, তাতে খাদ্যনিরাপত্তার মতো জাতীয় বিষয় তাদের মাথায় কতটুকু গুরুত্ব পাচ্ছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ, ক্ষমতাসীনদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড এ কথাই বলে, কিভাবে নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা যায় এটিই তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে; এমন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা