নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে
- ০৮ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
ঢাকা শহরের বাসিন্দারা দূষিত বায়ুর সাগরে ডুবে থাকেন সারা দিন, সারা বছর। কারণ, বায়ুদূষণে শহরটি কখনো শীর্ষে, কখনো দ্বিতীয় অবস্থানে। অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে ঢাকার অবস্থান এখন পর্যন্ত কেউ টলাতে পারছে না।
চলতি বছরের শুরু থেকে ঢাকার এ অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে এই মহানগরীর বায়ুর মান সূচক (একিউআই)। গতকাল শুক্রবারও বায়ুর মানের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরীর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল ঢাকা। ওই দিন সকাল ৯টায় মহানগরীর বায়ুর গুণমান সূচক (একিউআই) ১৭৮ স্কোর রেকর্ড করা হয়। যা রীতিমতো অস্বাস্থ্যকর। কারণ, একিউআই স্কোর ১০১-২০০ এর মধ্যে থাকলে ওই বায়ু বাসিন্দাদের জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে ধরা হয়। একই দিনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও ভিয়েতনামের হ্যানয় যথাক্রমে ১৮৮ ও ১৬৪ একিউআই স্কোর নিয়ে এ তালিকায় প্রথম ও তৃতীয় স্থানে ছিল।
বছরের শুরু থেকে প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক মাঝে মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত মানুষ তা জানতে পারে এবং তারা সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
এ তথ্য শুধু নগরবাসীর জন্য নয়। এতে নগরীর বা দেশের পরিবেশ রক্ষার কাজে নিয়োজিতরা দায়িত্ব পালনে কতটা সফল বা ব্যর্থ সেই বিষয়টিও সামনে আসে। স্বাভাবিকভাবেই আশা করা যায় যে, সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর বা বেসরকারি অংশীদাররা সচেতন হবেন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে নিজেদের করণীয় নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনো পদক্ষেপ কোনো পক্ষ থেকে নেয়া হয় না। তাই ঢাকা দীর্ঘ দিন ধরে বায়ুদূষণে ভুগছে।
শুকনো মৌসুমে নগরীর বায়ুর মান চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। আবার বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে কিছুটা উন্নত হয়। দূষণে মানুষের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকলেও বৃষ্টি ঝরিয়ে দূষণমুক্ত করার বিষয়টি পুরোপুরি আকাশের মালিকের হাতে। দায়িত্বে নিয়োজিতরা হাত গুটিয়ে বসে থাকলে সাধারণের জন্য খোদার ওপর ভরসা করার বিকল্প থাকে না।
অথচ ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের কারণগুলো অনেক আগেই চিহ্নিত। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎস তিনটি। এগুলো হলো ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আওতায় দীর্ঘকাল ধরে চলমান নির্মাণকাজের অনিয়ন্ত্রিত ধুলা। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে নানা সময়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, কিছু ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ চুল্লি বসানো, কাঠ পোড়ানো বন্ধ করা কিংবা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে ইটভাটার সংখ্যা সীমিত রাখার মতো পদক্ষেপগুলো তেমন কার্যকর হয়নি। যানবাহনের ধোঁয়া কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কতটা কী হয়েছে বোঝার উপায় নেই। কারণ গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নগরীর আয়তন ও সড়কের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে এ শহরে কতগুলো যানবাহন চলতে পারে সেই হিসাব বা তা অনুসরণের কোনো উদ্যোগ আদৌ নেই।
নির্মাণকাজ যারা করেন তারা নির্মাণের আনন্দেই আত্মহারা। কারণ নির্মাণ মানে জনগণের সেবা! একটি নির্মাণকাজে পরিবেশগত যেসব ব্যবস্থা নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে তার ন্যূনতম ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয় না এমন দৃষ্টান্ত সর্বত্র। সময়মতো প্রকল্প শেষ করারও কোনো তাগিদ নেই। কারণ মানুষের দুর্ভোগ, ভোগান্তিতে তাদের কিছু এসে যায় না। ফলে ঢাকার মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সমীক্ষা মতে, ২০১৯ সালে বায়ুদূষণজনিত কারণে ঢাকায় ২২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। এই হার সম্প্রতি বেড়েছে বলে মনে করার কারণ আছে। কিন্তু প্রতিকারের আশা সামান্যই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা