আশাবাদের জায়গা সামান্য
- ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
দেশে জনস্বাস্থ্য ও জনপুষ্টি দু’টিই যে অত্যন্ত নাজুক তাতে সন্দেহ নেই। ভেজাল খাদ্যপণ্য তৈরি ও বিপণন একরকম অবাধে চলছে বলা যায়। এ বিষয়ে সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক বা আইনগত ব্যবস্থার অভাব খুব একটা নেই। কিন্তু কর্মকাণ্ড প্রায় অদৃশ্য। মাঝে মধ্যে কিছু অভিযানের কথা শোনা গেলেও সংশ্লিøষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত কম।
একটি সহযোগী দৈনিকে গতকাল প্রকাশিত রিপোর্টে অপুষ্টির নতুন কিছু তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। মায়ের ওজন বেশি বা স্থূলকায়; কিন্তু তার সন্তানের ওজন কম, শরীর শীর্ণ ও বয়সের তুলনায় বৃদ্ধি কম; কিংবা মায়ের শীর্ণ শরীর, সন্তান অতি ওজন ও স্থূলতায় ভুগছে এমন দৃষ্টান্ত ক্রমেই বাড়ছে। দু’টিই আসলে অপুষ্টির নমুনা। পুষ্টিবিজ্ঞানের ভাষায় এটি হলো, ডাবল বারডেন অব ম্যালনিউট্রিশন (ডিবিএম) যাকে বাংলায় বলা যায়, অপুষ্টির দ্বিগুণ বোঝা। পুষ্টিবিদরা বলেন, অতি ওজন বা অতি শীর্ণ মা ও শিশু পরিবারে দ্বিগুণ স্বাস্থ্যঝুঁঁকি তৈরি করে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ওই গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ২১ শতাংশ পরিবার এ ধরনের অপুষ্টির শিকার। এর মধ্যে অতি ওজনের মা ও খর্বকায় বা কৃশকায় বা কম ওজনের সন্তানের হার ১৩ শতাংশের বেশি। আর কম ওজনের মা ও অতি ওজনের সন্তানের হার প্রায় ৮ শতাংশ। এ সমস্যার কারণ অনেকের জানা। বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে মা নিজের যতœ না নিয়ে সন্তানের প্রতি বেশি মনোযোগ দেন। যতেœর নামে সন্তানকে বেশি ফাস্ট ফুড খাওয়ান। এ দিকে সন্তানের কায়িক শ্রম, যেমন মাঠে ছুটোছুটি করে খেলাধুলা করার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রবণতা শহরের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি। তারা ফাস্ট ফুড বেশি খায়, খেলাধুলা করে কম ও টেলিভিশন, মোবাইলে বেশি সময় দেয়। এতে তারা স্থূলতার শিকার হয়। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার কারণে ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মায়েদের মধ্যে অতি ওজন ও অপুষ্ট সন্তান এবং কম ওজন ও অতি ওজনের সন্তানের হার বেশি। যেসব মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাদের মধ্যেও এ সমস্যা প্রকট। মায়েদের স্থূলতা বাড়লে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেড়ে যেতে পারে হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যার ঝুঁঁকি। প্রতিটি সমস্যা দেশে খুব দ্রুত বাড়ছে। সম্প্রতি সমাজে সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তার মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার পেছনে পুষ্টিহীনতা অন্যতম কারণ।
কিন্তু এর সমাধান আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। পুষ্টির ক্ষেত্রে আমাদের চিরাচরিত অচলাবস্থা বিদ্যমান। দেশে পুষ্টি বিষয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ দিতে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) নামের প্রতিষ্ঠানটির সারা দেশে সাতটি আঞ্চলিক কার্যালয়ও আছে; কিন্তু এর সার্বিক অগ্রগতির চিত্র বড়ই করুণ। ১৯৬৮ সালে যাত্রা শুরুর ৫৩ বছর পর প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে নিজস্ব কার্যালয়, গবেষণা মাঠ ও গবেষণাগার। গবেষণা শুরু করতে লেগেছে মাত্র ৫০ বছর! প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে লেগেছে ৪৫ বছর। এ দীর্ঘ সময়ে কতজন মানুষ প্রতিষ্ঠানটির নাম জানেন তা গবেষণার বিষয়। ফলে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতির কোনো আশা আপাতত না করাই ভালো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৯ সালে একটি অপুষ্টির মানচিত্র প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়, দেশের প্রতিটি উপজেলায় শিশুরা অপুষ্টিজনিত চারটি রোগে ভুগছে। এর মধ্যে খর্বাকৃতি ও ওজনস্বল্পতার সঙ্কট সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশীরা প্রায়ই খর্বকায়; কিন্তু সম্প্রতি অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি; বরং আরো খাটো হচ্ছে। এটি সত্যি আশঙ্কার কথা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা