ভিউ বাড়ানোর এ খেলা বন্ধ করুন
- ০৫ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
বাংলাদেশের সড়ক বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ। এতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানিও ঘটে। আমাদের সড়কে লাগাতার এমন উচ্চ ঝুঁকি দেখা গেলেও কর্তৃপক্ষের জোরদার পদক্ষেপ দেখা যায় না। এ জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম দাবি দাওয়াও বহু পেশ করা হয়েছে। কোনো ধরনের কার্যকর সংস্কারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়নি। নতুন খবর হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার জন্য মহাসড়কে প্রাণঘাতী এক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে কিছু গ্রুপ। সহযোগী একটি দৈনিকে দেশের কয়েকটি স্পটে মরণখেলা এই গতি প্রতিযোগিতার বর্ণনা দিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের প্রবণতা সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় কম বেশি দেখা যাচ্ছে। এতে অনেকে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জীবন নিয়ে খেলায় মত্ত হওয়া লোকদের রাশ টেনে ধরতে হবে।
পত্রিকাটি ইউটিউব ও ফেসবুকের কয়েকটি চ্যানেলের নাম উল্লেখ করেছে। বর্ণনা মতে, এরা প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চালানোর ভিডিও আপলোড করে। এরা যাত্রীবাহী বাস নিয়ে সড়কে গতির প্রতিযোগিতায় নামে। সাথে থাকা গ্রুপের সদস্যরা ভিডিও ধারণ করে। তারা চালক ও হেলপারকে উসকানি দেয় যাতে গতি বাড়ায়, এতে ভিডিওর ভিউ বাড়ানো যায়। অথচ বাসে থাকা যাত্রীদের জীবন তখন চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। ১৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এই প্রতিযোগিতা দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ঘটে। দুটো বাসের মধ্যে থেকে যাত্রীবেশী কিছু লোক চালককে উত্তেজিত করে। একপর্যায়ে দুটো যাত্রীবাহী বাস ১০০ কিলোমিটারে বেশি গতিতে একে অপরকে পেছনে ফেলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে।
ঢাকা-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা চট্টগ্রাম-রুটে কয়েকজন চালক দ্রুত গাড়ি চালানোর জন্য পরিচিতি পেয়েছেন। ভিউ বাড়ানোর পাশাপাশি সড়কে এই চালকদের মধ্যে বাজির খেলাও চলে। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানা যাচ্ছে, তারা অপরাধীদের শনাক্ত করছেন। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, দিনের বেলায় মহাসড়কে মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালালে ট্রাফিক স্পিডগান দিয়ে সেগুলো শনাক্ত করতে পারে। আটক করে ব্যবস্থা নিতে পারে। রাতের বেলায় এ ব্যবস্থা থাকে না। ফলে বাজিকররা রাতে ইচ্ছেমতে গতির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। দ্রুতগতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে গত এক বছরে তিন ট্রাফিক রাস্তায় প্রাণ হারিয়েছেন।
ভিডিও ধারণ করার জন্য মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের মধ্যেও প্রতিযোগিতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আয়োজন করে মোটরসাইকেল নিয়ে বখাটেদের রাস্তায় এই প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যমে এ ধরনের বহু ভিডিও রয়েছে। তাতে কিছু কিছু গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তেও দেখা যাচ্ছে। রোড সেফটি ফাইন্ডেশনের হিসাবে গত মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৫ শতাংশ মোটরসাইকেল আরোহী।
রোড সেফটির হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৫ দশমিক ৮৬ জন সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন। এ সংখ্যাটি আরো বেড়ে যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। তারা জানাচ্ছে, এ সময় ৭৯৪ জন আহত হয়েছেন। এদের অনেকে আবার পঙ্গু খোঁড়া হয়ে যান চিরতরে, যার খবর কেউ রাখে না। কেউ কেউ পরে প্রাণও হারান। আমাদের সড়কে প্রাণহানি সরকারকে কখনো উদ্বিগ্ন করেনি। এতে সরকারের কর্তাব্যক্তিরাও বিভিন্ন সময় প্রাণ হারিয়েছেন। তবুও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা উৎসাহিত হন না। এ অবস্থায় সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ব্যবসা, পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাবে। যেই প্রতিযোগিতায় এক শ্রেণী নেমেছে, তাতে হয়তো অসুবিধা হতো না যদি আমাদের রাস্তা এমন খেলার জন্য উপযুক্ত হতো। তাই বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে এ গ্রুপগুলোকে চিহ্নিত করা দরকার। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে প্রাণ নিয়ে খেলা বন্ধ করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা