অর্থনৈতিক সঙ্কট আরো গভীর করবে
- ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
মহামারী ও যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে যতটা গ্রাস করেছে, সেই তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়েছে বেশি। এ সময়ে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থা দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন কমেছে আমরা এক লাফে এর দাম রেকর্ড ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছি। এর বহুমাত্রিক প্রভাবে বাজারে সব পণ্যের দাম সীমার বাইরে বেড়ে গেছে। এ জন্য সবেচেয়ে বেশি চাপে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষ। সীমিত আয় দিয়ে বাজার থেকে নিত্যপণ্য ও খাদ্যপণ্য জোগাড় করতে তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। অথচ এ সময়ে আমাদের অর্থনীতির প্রধান দু’টি খাত পোশাক রফতানি ও প্রবাসী আয় স্থিতিশীল ছিল কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাই প্রশ্ন রয়ে গেল, বাজারে এমন দুরবস্থার কারণ কী, বৈশ্বিক না আমাদের অনিয়ম-লুটপাটের অর্থনীতি।
খবরে জানা যাচ্ছে, পোশাক রফতানি ও প্রবাসী আয় দুটোতে এবার নেতিবাচক ধারা শুরু হয়েছে। সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম ১৫৪ কোটি ডলার এসেছে গত সেপ্টেম্বরে। আগের দুই মাসে এসেছিল ২০৩ ও ২০৯ কোটি টাকা। প্রবাসী আয়ের ধারা লক্ষ করলে আমরা বুঝতে পারব, এটি ধারাবাহিকভাবে কমছিল। তবে সেপ্টেম্বরে এসে আগের মাসের চেয়ে এক লাফে ২৪ শতাংশ কমে এক প্রকার ধস নেমেছে। এ সময়ে প্রবাসী আয় সংগ্রহে নগদ সহায়তাদানসহ প্রবাসীদের প্রলুব্ধ করার নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। তারপরও বড় দাগে আয় কমে যাওয়া শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
রফতানি আয় নিয়ে সরকারের মধ্যে সন্তুষ্টি ছিল। করোনার পর তা সফলভাবে রিকভারি হয়েছিল। রফতানি প্রবৃদ্ধির এ ধারা ও এ থেকে আয় বৃদ্ধি বছর ধরে অব্যাহত ছিল। সরকারের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে গত বছরের তুলনায় রফতানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ নেতিবাচক ধারার মূল কারণ পোশাক রফতানি কমে যাওয়া। আমাদের বাণিজ্যের প্রধান খাত এটি। সেপ্টেম্বরে পোশাক রফতানি সঙ্কুুচিত হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি। হোম টেক্সটাইল সাড়ে ১৮ শতাংশ ও কৃষিপণ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ২৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে অনেকটাই ধস নেমেছে। তৈরী পোশাকের তুলনায় এ দু’টি খাতে রফতানি সামান্য। তাই তার প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতিতে সেভাবে পড়ছে না।
পোশাকশিল্পে আদেশ কমে যাওয়ার জন্য ইউরোপে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশী পোশাকশিল্পের মালিকরা জানাচ্ছেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় সরবরাহ তারা পাচ্ছেন না। ফলে চাহিদামতো পোশাক তৈরি করতে পারছেন না। এ কারণেও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন।
রফতানি ও প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিকতা এতদিন সরকারকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে মোটা দাগে বাঁচিয়েছে। যদিও ডলারের বিপরীতে আমাদের মুদ্রামানের পতন হয়েছে। কয়েক মাস ধরে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। ডলারের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এবার এ দুটো খাতে নেতিবাচক ধারা শুরু হওয়ার মধ্যে অর্থনীতির মূল সঙ্কট মোকাবেলার সময় সমাগত হয়েছে।
এ দুটো খাতের কারণে সরকার রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয় মিটিয়েছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেও সরকার কিছুটা স্বস্তিতে ছিল। সেপ্টেম্বরে এসে বৈদেশিক মুদ্রাপ্রবাহ কমে যাওয়ার প্রবণতা সামনে অব্যাহত থাকলে সরকার কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়বে। সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে থাকা সাধারণ মানুষের ওপর তা আবারো দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি ঘটাতে পারে। এ দুর্বিষহ অবস্থা তাই আরো খারাপ হতে পারে। সরকার নিজে কৃচ্ছ্র নীতি গ্রহণের কথা বলেছিল। বাস্তবে সেটি পারেনি। নতুন পরিস্থিতিতে দ্রুততার সাথে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ জরুরি, যাতে পরিস্থিতি একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা