বাতিল বা সংস্কারের আশা নেই
- ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
দেশে বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক স্বীকৃতি বরাবর উপেক্ষিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ও ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এ ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি হয়ে আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের বিষয়ে অংশীজন এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ব্যাপকভিত্তিক ঐকমত্য থাকার পরও এ বিষয়ে কোনোরকম অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো বিচারবিবেচনা আছে বলে মনে হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে আর্টিকেল নাইনটিন নামে একটি সংস্থার আলোচনায়ও নতুন করে এ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। সবাই একবাক্যে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে হুমকি। এ আইন ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে। এ আইন ঘিরে যেসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে ও ঘটছে সেগুলো দেশে এক সর্বব্যাপী ভয়ের সংস্কৃতির বিদ্যমানতা নিশ্চিত করে।
কখনো রাজনৈতিক কারণে, কখনো প্রশাসনিক কারণে ও কখনো সাংবাদিকদের হেনস্তা করতে এ আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা যান। একই মামলায় একজন কার্টুনিস্টকে বিনা বিচারে দীর্ঘ দিন কারাগারে থাকতে হয়। শুধু সংবাদপত্র নয়, বাংলাদেশে জ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চা করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়ছেন অনেকে। একজন বাউলশিল্পীর বিরুদ্ধেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।
একটি অনুষ্ঠানে একজন বক্তা বিতর্কিত মন্তব্য করেন এ অভিযোগে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরাকে গ্রেফতার করা হয় পুলিশের দায়ের করা মামলায়। খাদিজার বিরুদ্ধে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা, গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। তিনবার তার জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়।
গত চার বছরে এ আইনে একই ধরনের প্রায় দুই হাজার মামলা হয়েছে। এসব মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র দেখতে পেয়েছে, মোট মামলার ৪৭ শতাংশ করেছেন প্রভাবশালীরা। এ আইনে ৩৬ শতাংশ মামলা হয় সরকার, প্রধানমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কটূূক্তি ও অপপ্রচারের অভিযোগে। অভিযোগগুলোর কতটা সত্য তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই। এ জন্য আইনের দরকার আছে; কিন্তু আইনের নামে ভয়ভীতির আবহ তৈরি করে মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হলে তাকে সভ্য সমাজের উপযুক্ত পদক্ষেপ বলার উপায় থাকে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সেই কাজটি করছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ ব্যবহারে দেশের প্রায় সব নাগরিক উদ্বিগ্ন। সুশীল সমাজ মনে করছে, এ আইনের অপপ্রয়োগে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। আইনের ৪৩ ধারায় পুলিশকে পরোয়ানা ছাড়াই তল্লøাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিচার করা হয়। আবার দণ্ডবিধির একাধিক ধারায়ও মানহানির বিচারের ব্যবস্থা আছে। আইনের বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনো দেশে একই অপরাধের জন্য দু’টি আইন পাশাপাশি চলতে পারে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও নির্ভরযোগ্য গবেষণা থেকে দেখা যায়, যে দেশে যত বেশি তথ্যের অবাধ প্রকাশ নিশ্চিত করা যায়, সে দেশে তত বেশি মানবাধিকার সুরক্ষা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি অর্জিত হয়।
সমস্যা হলো, দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের কোনোরকম ব্যত্যয় ঘটেছে বলে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা স্বীকারই করে না। এ অবস্থায় সাংবাদিক, রাজনীতিকসহ সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা যতই আইনটি বাতিল বা সংস্কারে দাবি জানান না কেন, তা পূরণের কোনো আশা নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা