২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দেশে সারা বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ

নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই

-

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় সারা বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, গণমাধ্যমে এমন খবর পাওয়া যায়। সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর, এ চার মাস মূল মৌসুম। বছরের এই সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। চলতি বছরের জুন থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, এ বছর জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের জুন থেকে রোগী ভর্তি বেশি হতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর রোগী ভর্তির যে তথ্য দেয়, বাস্তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, স্বাস্থ্য অধিদফতর শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে আক্রান্তের সংখ্যা নির্ণয় করে।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জুন মাসে এ বছর ডেঙ্গুতে প্রথম মৃত্যু হয়। এরপর প্রতি মাসে মৃত্যু বেড়েছে। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৯ জন। আর এ বছর মারা গেছেন এখন পর্যন্ত ৫০ জন।
প্রতি বছর দেখা যায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ ঢাকায় বেশি থাকে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এবার ইতোমধ্যে দেশের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। দেখা যাচ্ছে- কক্সবাজার জেলায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলক বেশি। রাজধানী ঢাকায় মশার প্রজননের উপযোগী ক্ষেত্র বেশি থাকায় এ শহরে এডিস মশার উপদ্রব বেশি হয়। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা এই নগরীর খাল ও নর্দমা প্রজননের জন্য ভয়াবহভাবে সহায়ক। এ ছাড়াও শহরের বহু বাসাবাড়ির ছাদসহ নানা স্থানেও এডিস মশার লার্ভার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এই তথ্যের সত্যতা মিলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার বর্ষাকালীন মশা জরিপে। এই জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৩ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা বা শূককীট পাওয়া গেছে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে পাওয়া গেছে প্রায় ১২ শতাংশ বাড়িতে। যেহেতু এডিস মশা ডেঙ্গুর বাহক, তাই এর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া।
২০০০ সালে ঢাকা শহরে প্রথম বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এরপর প্রতি বছরই মশাবাহিত ভাইরাস ডেঙ্গু রোগে বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। ২০১৯ সালেও ব্যাপক আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন দেড় শতাধিক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর আক্রান্ত হন লাখো মানুষ। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। আগে ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে সমস্যা থাকলেও এ বছর দেশের বেশির ভাগ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় এটি এখন সারা দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতো আমরাও মনে করি, শহরাঞ্চল ছাড়িয়ে গ্রামীণ জনপদে ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য আগামী দিনে ভয়াবহ হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হবে। তখন তা সামাল দেয়া কঠিন হবে, এটি নিশ্চিত করে বলা যায়। তাই বর্ষাকালীন এই রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এর বাহক এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো নির্মূলে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement