২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নারী ফুটবলারের অর্থ খোয়া যাওয়া

বিমানবন্দরে অনিয়ম-যাত্রী হয়রানি

-

দেশের প্রধান এয়ারপোর্ট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের নানা ভোগান্তি ও লাঞ্ছনার খবর প্রতিনিয়ত পাওয়া যায়। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটাতে না পারলেও মাঝে মধ্যে এ নিয়ে দুর্ভোগ চরমে ওঠে। ঘটে লাগেজ গায়েব হয়ে যাওয়া থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়ার ঘটনা। সাধারণ যাত্রীরা প্রতিদিন এই দুর্ভোগ মোকাবেলা করছেন। প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকরা এ ঘটনার সবচেয়ে বেশি শিকার। তবে বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যখন ঘটে সংবাদমাধ্যমে তখন খবর হয়। এবার সাফবিজয়ী নারী ফুটবলারদের লাগেজ কেটে অর্থ বেহাত হওয়ার অভিযোগ করেছেন দু’জন ফুটবলার। কর্তৃপক্ষ এমন ঘটনা শাহজালালে ঘটেনি বলে দাবি করলেও নিত্যদিনকার বহু অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণ সংবাদমাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে।
নারী ফুটবলার কৃষ্ণা রানীর ৯০০ ডলার ও শামসুন্নাহারের ৪০০ ডলার খোয়া গেছে। এমন সময় ঘটনাটি ঘটেছে তাতে পুরো জাতির দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নির্ণয়ের আগে মানুষ এমন ঘটনায় নিন্দা ও লজ্জা প্রকাশ করছেন। এর প্রধান কারণ বিমানবন্দরে এর আগে ঘটা এ ধরনের শত শত ঘটনার কোনো সুরাহা না হওয়া। এ ঘটনায় ফুটবল ফেডারেশন পৃথক দু’টি সাধারণ ডায়েরি করেছে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করছে- এ ঘটনা সেখানে ঘটেনি। এর সমর্থনে বলছে, বিমান অবতরণ থেকে দলটি বিমানবন্দর ছাড়া পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজ যাচাই করা হয়েছে। সেখানে লাগেজ কেটে অর্থ সরিয়ে নেয়ার কোনো ঘটনা দেখা যায়নি।
শাহজালাল কর্তৃপক্ষের হিসাবে, প্রতিদিন শতাধিক লাগেজ খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটে। লাগেজসহ মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়ার ঘটনা থেকে রেহাই পান না ভিআইপি যাত্রীরাও। এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতামূলক সাড়া পাওয়াও দুরূহ। প্রায়ই দেখা যায়, লাগেজ হারিয়ে যাত্রীরা তার কোনো হদিস না পেয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিমানবন্দর ছাড়েন। সাধারণত প্রবাসীরা স্বজন ও প্রিয়জনের জন্য বিদেশ থেকে উপহারসামগ্রী নিয়ে আসেন। দেশের বিমানবন্দরে সেগুলো খুইয়ে হতাশ হয়ে খালি হাতে আপনজনের কাছে ফিরেন। শাহজালালে যাত্রীদের সর্বস্ব খোয়া যাওয়ার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ নামের একটি বিভাগ রয়েছে; সেখানে অভিযোগ করা যায়। সংবাদমাধ্যমে পাওয়া খবরে দেখা যাচ্ছে, হারানো জিনিস বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরা ফিরে পান না।
এ ছাড়া যাত্রীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। বিশেষ করে লাগেজসহ মালপত্র নিয়ে বিমানবন্দর পার হয়ে আসা যেন একটি যুদ্ধ। প্রায়ই লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। পাওয়া যায় না ট্রলি। যাত্রীদের মালপত্র নিজেদের মাথায় নিয়ে পার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধরা এ অবস্থায় বিপদে পড়ছেন শাহজালালে।
আমাদের বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সাথে হচ্ছে না নিশ্চিতভাবে বলা যায়। এ নিয়ে বহু দেনদরবার হয়েছে; কিন্তু সমস্যার মূল জায়গায় হাত দেয়া হয়নি। যত অভিযোগ আসে সেগুলো যথাযথ তদন্ত হয় না। ভেতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মী যেসব অন্যায় অনিয়ম করে থাকেন সেগুলো নিয়ে কখনো জবাবদিহি হয় না। ফলে একই ধরনের অপরাধ বেড়ে চলেছে। সাফ ফুটবলে জিতে নারী দলটি যখন জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে; ঠিক তখন এ ধরনের একটি অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। এ ক্ষেত্রে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাটি শাহজালালে হয়েছে কি না সেটি প্রমাণিত নয়। তবে শাহজালালে অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও অপরাধ হচ্ছে। এ সুযোগে আমরা চাইব, এসবের অপনোদন হোক। সেখানে সততা ন্যায়পরায়ণতা ফিরে আসুক। বন্দরব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আসুক। যাতে একজন যাত্রীকেও সেখানে যেন কিছু খোয়াতে না হয়। একইসাথে তারা যেন সদাচরণ পান।


আরো সংবাদ



premium cement