অভিযোগ অস্বীকার করাই সমাধান নয়
- ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন আন্তর্জাতিক বিশ্বে সঞ্চারিত। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মতো চরম ব্যবস্থা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুব লজ্জার। কিন্তু বিষয়টি সেখানে থেমে নেই। পাশ্চাত্যের অনেক বন্ধুপ্রতিম দেশও বিভিন্ন সময় এ নিয়ে কথা বলেছে। সর্বশেষ জাতিসঙ্ঘ সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকারের বিষয়ে কাজ করে চলেছে। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সাবেক কমিশনার বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তিনি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বেশ কিছু সুপারিশ ও উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন সরকারের প্রতি।
সর্বশেষ জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের গুমবিষয়ক কমিটি (ডব্লিউজিইআইডি) জোরপূর্বক নিখোঁজের বিষয়ে র্যাবের বিরুদ্ধে স্বাধীন ও পক্ষপাতহীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। গুমের শিকার পরিবারের সদস্য, সুশীল সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীদের হুমকি, ভয়ভীতি এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারকে বলেছে এ কমিটি। গত মঙ্গলবার জেনেভায় কাউন্সিলের ৫১তম সেশনে পেশ করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুম নিয়ে তদন্ত করতে ডব্লিউজিইআইডি ২০১৩ সালের ১২ মার্চ থেকে বাংলাদেশ সফরের জন্য একাধিকবার আগ্রহ জানিয়ে এসেছে। সর্বশেষ অনুরোধ ২০২০ সালের ২৪ এপ্রিল করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ সরকার।
আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা দেশের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে তদন্ত করবে এটি দৃশ্যত দৃষ্টিকটু। সরকারের আপত্তি থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিকল্প হলো- সরকারের পক্ষ থেকে শতভাগ নিরপেক্ষ ও দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য তদন্ত করা। অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের সুযোগ না দেয়া মূলত নিজেদের দুর্বলতা তুলে ধরে।
যেমন- জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের গুমবিষয়ক কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার তথ্য ও প্রমাণসহ অভিযোগ তোলার আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডব্লিউজিইআইডি গুম নিয়ে যেসব অভিযোগ করেছে, তাদের অনেকে আবার ফিরে এসেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, গুম নিয়ে তোলা অভিযোগ প্রমাণিত নয়। আইনি কাঠামোর মধ্য থেকে আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতা নিয়ে সব হারানো ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বলা হয়, কিছু দুর্বৃত্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে গুমের মতো অপরাধ সংঘটিত করছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যেকোনো অপরাধ, অপকর্ম ও সীমা লঙ্ঘনের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে এমন কথা সেখানে বলেছে সরকার। এসব কথার সাথে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে-ময়দানে নেতাদের দেয়া বক্তব্যের তেমন পার্থক্য নেই। মাঠের বক্তৃতার প্রমাণ লাগে না, যদি সেটি সরকারি দলের বক্তব্য হয়।
সমস্যা হলো, মেঠো বক্তৃতার ওপর ভিত্তি করে জাতিসঙ্ঘ বা যুক্তরাষ্ট্র কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। সে জন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে সরকারের সাথে থেকে সহায়তার প্রস্তাবও দেয়। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদ কমিশনের সাবেক কমিশনার মিশেল ব্যাচেলে তার সংবাদ সম্মেলনে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
বর্তমানে মানবাধিকারের বিষয়টি সাধারণভাবে অনেকটা বড় হয়ে উঠেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা মৌলিক নাগরিক অধিকারের বিষয়গুলো আলোচনায় আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন ও প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন এবং ওটিটি নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানে উন্নীত করার মতো বিষয়গুলো এখনো অনিষ্পন্ন। আমাদের বিশ্বাস, আরো কোনো বড় ধাক্কা আসার আগে সরকারের সতর্ক হওয়ার সময় এখনো আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা