২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
চুলা জ্বলে না, কমছে শিল্প উৎপাদন

গ্যাস আহরণে জোর দিতে হবে

-

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এখন গ্যাস সঙ্কট চলছে। দিনের অনেকটা সময় চুলা জ্বলছে না। একই পরিস্থিতি শিল্প কারখানায়। গ্যাসের অভাবে কারখানা স্বাভাবিকভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না। অনেক কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। পরিবহন খাতও ভুগছে গ্যাস সঙ্কটে।
সারা দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা মোট ৩৮০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা আগে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো সরবরাহ করত। এখন করতে পারছে মাত্র ২৭৫ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট। কারণ, চড়া দামের কারণে বিশ্ববাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা সম্ভব হচ্ছে না। আড়াই মাস ধরে এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। রাজধানীবাসী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাদের গ্যাস মর্মপীড়া আরো বেড়ে যায় গ্যাসবিল পরিশোধ করতে গিয়ে। গ্যাস দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হলেও সরকার মাত্র দু’মাস আগে গ্যাসের দাম আবারো বাড়িয়েছে।
পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়, রাজধানীর শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, দোলাইরপাড়, পুরান ঢাকার অনেক অংশে বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলছে না। মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, মিরপুর, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ, শান্তিবাগ, যাত্রাবাড়ী, বাসাবোসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
অনেক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এসব এলাকায় এখন সিলিন্ডারই ভরসা। যাদের সিলিন্ডার নেই, তারা ভোরে রান্না করেন। রাজধানীর শত শত বস্তির গরিব মানুষের অবস্থা চরমে। অনেক জায়গায় রাতে চুলা জ্বললেও সারা দিন গ্যাসের চাপ থাকে না। কোনো এলাকায় রাতেও চুলা জ্বলছে না। ক্রয়ক্ষমতাহীন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে। তারা ঘরে রান্না করতে পারছে না। বাইরে থেকে কিনে খাওয়ার মতো অর্থও নেই। ফলে অনেককে দিনের বেশির ভাগ সময় অভুক্ত থাকতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসে অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। তিতাস বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। সরবরাহ না বাড়লে সঙ্কট সমাধানে তাদের কিছু করার নেই। এ দিকে বিপুলসংখ্যক অবৈধ সংযোগ দিয়ে গ্যাস টেনে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু এ বিষয়ে তিতাসের মুখে রা নেই। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান একটি দৈনিককে বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনা গত জুলাই থেকে বন্ধ করা হয়েছে। এ জন্য গ্যাসের সরবরাহ ৭ থেকে ৮ শতাংশ কমানো হয়েছে। যেসব সেবা বা পণ্য উৎপাদনে গ্যাস লাগে অর্থাৎ বিদ্যুৎ, সার কিংবা শিল্পকারখানাকে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় সাড়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে সরকার এখন পর্যন্ত দৈনিক সরবরাহ করে তিন হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় উৎপাদন প্রতিদিন দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর রাজধানীতে এখন দিনে ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ মিলছে ১৬০ কোটি ঘনফুটের মতো। গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে না পারলে সঙ্কট থেকেই যাবে। কিন্তু গ্যাস খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন, আমদানি করা গ্যাস দিয়ে চাহিদা পূরণের চিন্তা ভুল। তারা গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ওপর জোর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু গত এক যুগের বেশি সময় ধরে এই কাজটিতে মনোযোগ দেয়নি সরকার। ফলে সঙ্কট তীব্র হয়ে এখন গলা টিপে ধরার উপক্রম হয়েছে।
সঙ্কটের এই চরম পর্যায়েও সরকার যদি গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বিনিয়োগ না করে তাহলে হয়তো আবারো মানুষকে লাকড়ির চুলার যুগে ফিরে যেতে হবে। সেটিও প্রায় অসম্ভব হবে, কারণ বিপুল পরিমাণ লাকড়ির জোগান দেয়ার মতো বৃক্ষসম্পদ আমাদের নেই।
সামনে যে কঠিন পরিস্থিতি আসছে তা এড়াতে সরকার দ্রুত জ্বালানিনীতি সংশোধন করে অভ্যন্তরীণ গ্যাস আহরণে অগ্রাধিকার দেবে, এটিই প্রত্যাশিত।


আরো সংবাদ



premium cement