ভিন্ন মত দমনে অপপ্রয়োগ
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
তীব্র সমালোচনার মুখে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়। শুরু থেকে আইনটির প্রয়োগ নিয়ে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের শঙ্কা ছিল, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মতো এ আইনের অপপ্রয়োগ হবে। কখনো রাজনৈতিক কারণে, কখনো প্রশাসনিক কারণে ও কখনো সাংবাদিকদের হেনস্তা করতে এ আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখন তারা বলছেন, তাদের ওই আশঙ্কা সত্যি হয়েছে।
আইনটি পাস হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করছেন বলে অভিযোগ করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সাধারণ মানুষকে হেনস্তার পাশাপাশি ভিন্ন মত দমনে এ আইন ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। সহযোগী এক দৈনিকে এ নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশের মাশুল গুনতে হয়েছে সাংবাদিকদের। এতে আরো বলা হয়, শুধু সংবাদপত্র নয়- বাংলাদেশে জ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চা করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়ছেন অনেকে।
মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন আর্টিকেল-১৯ বলছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫১৪টি মামলার তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করেছে সংগঠনটি। এর মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৯৩টি। অর্থাৎ ১৮ শতাংশ মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় ৯৭৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৯ শতাংশ আসামি হচ্ছেন সাংবাদিক।
প্রণয়ন হওয়ার পর গত চার বছরে এ আইনে এক হাজার সাত শতাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আইন ও সালিশ কেন্দ্র ৩৫৩টি মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৬৫টি মামলার বাদি পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। অর্থাৎ মোট মামলার ৪৭ শতাংশ করেছেন প্রভাবশালীরা। এ আইনে ৩৬ শতাংশ মামলা হয় সরকার, প্রধানমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও অপপ্রচারের অভিযোগে।
বেসরকারি সংগঠন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের এক গবেষণা মতে, সবচেয়ে বেশি মামলা হয় ওই আইনের ৩৯ ধারায়। ধারাটি মূলত মানহানির তথ্য প্রচারবিষয়ক। অভিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা বিবেচনায় এ আইনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ২৫ ধারা। এ ধারা হচ্ছে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি। ধর্মীয় বিষয়ে মন্তব্য করেও অনেকে এ মামলার আসামি হচ্ছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ আইনের ১০ শতাংশ মামলা হয় ধর্মীয় বিষয়ে মন্তব্য করার কারণে।
আইনটির ভয়াবহ অপপ্রয়োগ হচ্ছে জানিয়ে সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, যতজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ আইনের প্রয়োগ করা হয়েছে, একটিও যথার্থ সাংবাদিকতার কারণে প্রয়োগ করা হয়নি। শুধু প্রতিহিংসার কারণে আইনের অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, সরকারি দলের লোকজন অতি উৎসাহী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করছেন। এমনকি সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে যৌক্তিক সমালোচনা করেও অনেকে মামলার আসামি হয়েছেন। আর্টিকেল-১৯-এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেছেন, ভয় দেখাতে এ আইন করা হয়েছে- বিশেষ করে সাংবাদিকদের জন্য। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ যেন কোনো কথা না বলে।
সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের মতো আমরাও মনে করি, সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আইনজীবীসহ সব পেশার মানুষ এ আইনের মামলায় ভুক্তভোগী হয়েছেন। আইনটির কারণে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা যাচ্ছে না। ফলে আইনটি রাখার যৌক্তিকতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা