২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়া সুষ্ঠু নয়

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

-

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় অংশ আসে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি বাংলাদেশী কর্মরত। তাদের পাঠানো অর্থ আমাদের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। তাই প্রবাসীদের অভিবাসন প্রক্রিয়া ও কর্মজীবন যাতে নির্বিঘœ ও স্বচ্ছন্দ হয় সেটি দেখা জরুরি। সরকারের সেই ব্যবস্থাপনার আয়োজন আছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও নানা সংস্থা এ নিয়ে কাজ করে। বিদেশে আমাদের দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোরও তৎপর থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবে সরকারের সব মেশিনারি কখনোই সার্বিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখে না। দায়িত্বে অবহেলা, উদাসীনতা, দুর্নীতির মতো অভিযোগ আছে, যা গোটা প্রক্রিয়াকে আগাগোড়া প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বিদেশগামী কর্মীদের নানাভাবে প্রতারণা করছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। প্রতারণায় নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। অনেক তরুণের প্রাণ গেছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।
সাম্প্রতিক সময়ে যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারাও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। নয়া দিগন্তের এক খবরে জানা যাচ্ছে, গত আট মাসে প্রায় আট লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। কিন্তু এদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক কর্মী আকামাসহ নানাবিধ সমস্যায় রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন সৌদি আরব ও দুবাই যাওয়া কর্মীরা। একই অবস্থা শ্রমশক্তির দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর অনেক চেষ্টা তদবির শেষে সম্প্রতি দেশটিতে শ্রমিক পাঠানো শুরু হলেও আগের মতোই জটিলতা এখনো চলছে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবারো সিন্ডিকেটের অশুভ থাবা পুরো প্রক্রিয়া নস্যাৎ করছে। যে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি সে দেশে শ্রমিক পাঠানোর দায়িত্ব পেয়েছে সেগুলোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া তাদের চাহিদাও অনেক বেশি। একজন কর্মীর বিপরীতে কোনো কোনো এজেন্সি তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা দাবি করছে। অথচ দেশটিতে শ্রমিক পাঠাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি সেখানে শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার অন্যতম ইস্যু ছিল। এখন খুব সামান্যসংখ্যক শ্রমিকই মালয়েশিয়ায় গেছেন। কম শ্রমিক যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ ওই দেশের বাংলাদেশী হাইকমিশনের ঢিলেমিকে দায়ী করছেন। কিন্তু তা নিরসনে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে নেপালের মতো প্রতিযোগী দেশের শ্রমিকরা বেশি সংখ্যায় মালয়েশিয়ার বাজার দখল করে নিচ্ছে।
শুধু মালয়েশিয়া নয়, বিদেশে শ্রমবাজার নিয়ে আমাদের দূতাবাসগুলোর বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গণমাধ্যমে সেসব খবর প্রায়ই প্রকাশ পায়। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতির কোনো আলামত দেখা যায় না। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক যাওয়া এখনো বন্ধ। সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি শ্রমবাজারে অস্থিরতা চলছে। সেখানে শ্রমিকরা হয়রানি-ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ দিকে পুরো শ্রমবাজারের চালচিত্র পাল্টে যেতে শুরু করেছে। সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশ এখন নিজস্ব শ্রমশক্তি গড়ে তোলার দিকে মনোযোগী হচ্ছে। সৌদি আরব ১২টি সেক্টরে কোনো বিদেশী শ্রমিক নেবে না। ওই সব খাতের বিদেশী শ্রমিকরা ফিরে যাচ্ছেন। এ প্রবণতা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে মনে হয়। বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার এখনই সময়।
বাংলাদেশ বিপুল জনশক্তির দেশ। এ জনশক্তিকে সম্পদে পরিণত করার কথা বহু বছর ধরে বলা হচ্ছে। সরকারও তাতে কণ্ঠ মেলায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বিদেশে নতুন বাজার অনুসন্ধান, শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরির জোরালো ও কার্যকর উদ্যোগ লক্ষযোগ্য নয়।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এ মুহূর্তে চাপে রয়েছে। হুন্ডির দৌরাত্ম্যে রেমিট্যান্স কাক্সিক্ষত পরিমাণে আসছে না। এখন বিদেশের শ্রমবাজারও যদি সরকারের উদাসীনতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতি ইত্যাদি কারণে হাতছাড়া হতে থাকে তাহলে পরিণতি কারো জন্য সুখকর হবে না। সরকার এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেবে এটিই কাক্সিক্ষত।

 


আরো সংবাদ



premium cement