আস্থা অর্জন থাকল পেছনে পড়ে
- ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তাদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। নির্বাচন আয়োজনে তারা ১৪টি চ্যালেঞ্জ দেখতে পাচ্ছে, আর তা মোকাবেলায় ১৯টি করণীয় ঠিক করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অনুপস্থিতিতে আয়োজিত ছন্দহারা এ অনুষ্ঠানে নিজেদের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার কথাই তারা ঘুরেফিরে বলেছে। তবে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ইভিএম তাদের অগ্রাধিকার। অনুষ্ঠানে সরবরাহ করা তাদের লিফলেটে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। অথচ বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের, নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো আস্থা নেই। ওই অনুষ্ঠানের পরপরই বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘ইসি-ই মানি না, রোডম্যাপ দিয়ে কী হবে’? একই ধারার মূল্যায়ন করতে দেখা গেছে সংসদে থাকা বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- জাতীয় রাজনীতির ধারাকে সঠিকভাবে বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে ইসি।
ইসির বক্তব্যে উঠে এসেছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের মূলত সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে। বিরোধীদের ওপর আক্রমণ, মারধর, ভীতি প্রদর্শন, নির্বাচনের আগে হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ করা- এগুলো কঠোরভাবে নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে সব প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নির্দ্বিধায় একজন নাগরিক যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন। এগুলো একটি নির্বাচনী সমতল মাঠ তৈরির জন্য প্রয়োজন। এর সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী ভূমিকা প্রয়োজন। বিগত দু’টি জাতীয় নির্বাচনে দেখা গেছে- আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও সরকারি দলের সাথে যুক্ত হয়ে বিরোধীদের ওপর হামলে পড়েছে। প্রচার-প্রচারণা দূরে থাক, অনেক প্রার্থী তার নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারেননি। এবার কিভাবে ইসি বিরোধীদের জন্য এ ব্যবস্থা পাল্টে দেবে সে ব্যাপারে তাদের কোনো জোরালো অঙ্গীকার নেই। নির্বাচনের সময় পুলিশ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। তবে এই সাংবিধানিক অঙ্গীকার পালনে তাদের মধ্যে দৃঢ় কোনো ইচ্ছা প্রকাশ পায়নি।
ইসির সাথে সংলাপে অংগ্রহণকারী বেশির ভাগ দল ইভিএমের বিরুদ্ধে বলেছে। তাদের সাথে সংলাপ করেনি এমন প্রত্যেকটি দলও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া জনপরিসরে ইভিএমের বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি দেখা গেছে। অথচ তাদের এই রোডম্যাপের বড় দিক হচ্ছে- ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ। আরো হতাশার খবর হচ্ছে- ইভিএম কেনা নিয়ে দুর্নীতি হওয়ার আশঙ্কা। দুই লাখ ইভিএম কেনার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এ জন্য আট হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। এর আগের বিতর্কিত হুদা কমিশন একেকটি ইভিএম দুই লাখ ৩৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছে। খবরে জানা যাচ্ছে, একই ইভিএম ভারত কিনেছে ২১ হাজার ২৫০ টাকা দিয়ে। প্রতিটি ইভিএম হুদা কমিশন প্রায় ১১ গুণ বেশি দামে কিনেছে। এমন দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত হয়নি। এ জন্য কারা দায়ী সে ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই। এবারো ইভিএমে শেষ পর্যন্ত ভোট হবে কি না, তা নিয়ে যখন পূর্ণ নিশ্চয়তা নেই তখন এমন কেনাকাটায় বড় অপচয় হতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। তার পরও এ কেনাকাটা নিয়ে এত তোড়জোড় ও উতসাহ কেন, সেই প্রশ্ন সৃষ্টি করছে জনমনে।
নির্বাচন কমিশনকে আমাদের জাতীয় বাস্তবতা উপলব্ধি করা উচিত। নবগঠিত কমিশন আগের বিতর্কিত কমিশনের চেয়ে ভালো কিছু জাতিকে উপহার দিতে পারবে এমন কিছু এখনো দেখাতে পারেনি। এ অবস্থায় তাদের দরকার ছিল ভাবমর্যাদার সঙ্কট উৎরানো। তাদের দেখানো উচিত মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার সংরক্ষণে তারা পূর্ণ আন্তরিক। অথচ তারা সরকারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলছে বলে অনুমান হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে তাদের বের হয়ে আসার চেষ্টা চালাতে হবে। সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তারা নির্দলীয় সঠিক অবস্থান গ্রহণ করবে, এমন প্রত্যাশা জাতির।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা