২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
স্লুইসগেটে প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ

কৃষিতে বিপর্যয় মেনে নেয়া যায় না

-

নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালীর উপকূলবর্তী কলাপাড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে ক’টি নদী বয়ে গেছে। এগুলোর চার পাশে রয়েছে পাউবোর বেড়িবাঁধ। প্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি সরাতে কিংবা নদীর পানি তোলার জন্য আছে ১৯৩টি স্লুইসগেট বা জলকপাট। এর মধ্যে ভালো আছে ১৪৮টি। অবশ্য এর মধ্যে ৪৫টি জলকপাট ঝুঁকিপূর্ণ। ‘ভালো’গুলো তেমন কার্যকর নেই। এর কারণ, এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি। ভাঙা কপাট বা গেট পানি নিষ্কাশন করতে পারে না। ফলে এবার আমন ধানের চাষ নিয়ে বেশ শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অপর দিকে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা স্লুইসগেট বা জলকপাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘ খালে মাছ ধরতে পানি নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে তারাই লাভবান হচ্ছেন। অথচ বর্ষায় জলাবদ্ধতা ও শুকনা মৌসুমে লোনা পানি ঢুকে শত শত চাষির সর্বনাশ ঘটায়। তাই কৃষিজমি হয়ে যাচ্ছে অনাবাদি। আর সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তো বলাই বাহুল্য।
এ প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলতি বছর বর্ষায় বৃষ্টি হয়েছে কম। বৃষ্টির অভাব হলে পানি সেচ দিতে হয়। কিন্তু বহু স্লুইসগেটের মুখে মাটি জমে সংশ্লিষ্ট খাল ভরাট হয়ে গেছে। এ দিকে, সামান্য বৃষ্টিতেও পানি নদীতে চলে যায়। ফলে আমন আবাদে ঘটছে বিপর্যয়। পাউবো জানায়, তদানীন্তন ওয়াপদা ১৯৬০ সালে ১৯৩টি স্লুইসগেট ও সংশ্লিষ্ট খালাসিদের আবাসের জন্য ১৫-৫০ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ দেয়। তবে ৩৮ বছর পরে ১৯৯৮ সালে এই খালাসি নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাদের ভবনগুলো হয়ে পড়ে পরিত্যক্ত। কলাপাড়া উপজেলায় বর্তমান পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ আছে। প্রয়োজনে এ বাঁধে ১১টি স্লুইসগেট নির্মিত হয়। এগুলো মেরামত করতে বলা হয়েছে ‘উপরে’। দুর্যোগে জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে এই বাঁধ তৈরি করা হয়। তবে এখন এখানে মোট স্লুইসগেট আছে ছোট-বড় ১৯৩টি। এসব গেট নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন খালাসিরা, যারা পাউবোর নিয়োগকৃত। তারা পাশেই পাকা ঘরে বাস করতেন। কৃষিকাজসহ মানুষের জীবনযাত্রার স্বার্থে তারা পানির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু খালাসিদের পদ বাতিল হলে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা স্লুইসগেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যান।
জানা গেছে, তিন ভেন্টের স্লুইসটির রিভার সাইট ২০ ফুট নদী খেয়ে ফেলেছে। তদুপরি মাটিতে গর্ত হয়ে গেছে। অর্ধেকটা বিলীন। উইং ওয়ালসমেত ব্লক নেই। আমন মৌসুম শেষের পথে। এবার পানি সেচ দরকার বেশি। কিন্তু এ জন্য খালের লোনা পানি ব্যবহার করা যায় না। বাঁকা হয়ে যাওয়া জলকপাট কোনো পানিই ধরে রাখতে পারে না।
জানা যায়, ইউএনওকে সভাপতি ও পাউবোর স্থানীয় প্রকৌশলীকে সদস্যসচিব নিয়ে এবং একজন করে কৃষক ও শিক্ষক ছাড়াও কৃষি কর্মকর্তা এবং ইউপি মেম্বারসহ সাতজন একেকটি স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের চাপে তাদের কোনো ভূমিকা দেখা যায় না। সরকারের কৃষি বিভাগ স্বীকার করেছে, ‘এবার এ উপজেলায় ২৯ হাজার হেক্টরে আমন ধান আবাদের কথা। তবে অনেক স্লুইসগেটই অকার্যকর। তাই পানি নিষ্কাশন কিংবা সংরক্ষণ করা যায় না।’ তাই এগুলো মেরামত করা জরুরি। কৃষির সুবিধার্থে প্রকৃত চাষিরা গেটগুলো নিয়ন্ত্রণ করলে কৃষকরাই সুবিধা পাবেন। তখন এক ফসলি জমি হবে তিন চাষের অধীন এবং উৎপাদন এতে বাড়বে। পাউবো বলেছে, ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে। তিনটি স্লুইসগেট মেরামত ও আটটি নবনির্মাণ করা হচ্ছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ‘৩৯টি ক্ষতিগ্রস্ত জলকপাট মেরামত করা হচ্ছে। আর উপরে প্রেরিত, পুনর্নির্মাণ তালিকামাফিক অনুমতি ও বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।’
আমরা আশাবাদী, কৃষির বিপর্যয় রোধে কলাপাড়ায় যত শিগগিরই সম্ভব সব স্লুইসগেট সংস্কার করা হবে। অন্যথায়, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।


আরো সংবাদ



premium cement