২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের হিড়িক

ঠিকাদারের অর্থে ভ্রমণ অনৈতিক

-

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকায় ডলার বাঁচাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর বন্ধ এবং বিলাসপণ্য আমদানির রাশ টেনে ধরার বিষয়টি সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়।
কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয় চলতি বছর মে মাসের প্রথমার্ধে। কিন্তু সে আদেশ কার্যকর হয়নি। ওই নির্দেশনার পর কিছু দিন বিদেশ সফরের সরকারি আদেশ জারি বন্ধ ছিল। কিন্তু নির্দেশনা বলবৎ থাকলেও নানা ফাঁকফোকর বের করে এখনো আগের মতো বিদেশ ভ্রমণ চলছে। তফাৎ শুধু এটুকু যে, আগে সরকারি অর্থ বা প্রকল্পের টাকায় সফর দেখানো হতো। এখন নতুন কৌশলে অন্যের নামে চালানো হচ্ছে। গত চার মাসে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের যেসব খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ হওয়া দূরের কথা বরং নতুন করে যেন হিড়িক পড়েছে।
বিদেশ ভ্রমণ বন্ধের আদেশে বলা হয়েছিল, করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বর্তমান বৈশ্বিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষা সফর, এপিএ এবং ইনোভেশনের আওতামুক্ত ভ্রমণ ও ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। এ আদেশ উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
অর্থমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন- এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর আর নয়। বিশেষ কারণ ছাড়া কেউ বিদেশ সফরে যাবেন না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ‘পরিষ্কারভাবে’ বলে দেয়ার পরও কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর কমেনি।
বিদেশ ভ্রমণের নতুন যে হিড়িক তার একটি নতুন বৈশিষ্ট্য আছে। দেখানো হচ্ছে যে, এখন যারা ভ্রমণে যাচ্ছেন তাদের ভ্রমণব্যয় সরকারের তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে না। বরং এসব ব্যয় বহন করছে সংশ্লিষ্ট সফরের আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ অথবা কোনো দাতা সংস্থা।
‘এসির বাতাস খেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা মালয়েশিয়ায়!’ অথবা ‘নলকূপ খনন প্রশিক্ষণে একাধিক কর্মকর্তার বিদেশ সফর’, ‘একটি ক্যামেরা কিনতে তিনজনের বিদেশ ভ্রমণ’, ‘লিফট ক্রয়ের উদ্দেশে বিদেশ সফর’, ‘নিরাপদ পানি সংরক্ষণপ্রক্রিয়া প্রশিক্ষণে উগান্ডা গমন’ ইত্যাদি অনেক সফরের ফিরিস্তি নানা সময়ে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। সর্বশেষ, ‘মাশরুম চাষ শিখতে বিদেশ যেতে চান ৩০ কর্মকর্তা’ এমন একটি খবর পত্রিকায় প্রকাশের পর ওই প্রকল্প থেকে বিদেশ ভ্রমণ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
এভাবে জনগণের ট্যাক্সের টাকা পানিতে ফেলা রীতিমতো অপরাধ। এ অধিকার সরকারি কর্মকর্তাদের থাকতে পারে না। ইদানীং বলা হচ্ছে, কর্মকর্তাদের ভ্রমণের সম্পূর্ণ খরচ বিদেশী কোম্পানি কিংবা তাদের এ দেশীয় এজেন্টরা বহন করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। আয়োজক কর্তৃপক্ষ ব্যয় বহন করলে বলার কিছু নেই। তবে সে ক্ষেত্রেও দেখার বিষয় থাকে যে, যে বিষয়ে সফর হচ্ছে, সফরকারী কর্মকর্তা সেই বিষয়ের সাথে কতটা সংশ্লিষ্ট কিংবা তিনি যোগ্যতম ব্যক্তি কিনা। প্রকৌশলবিষয়ক সফরের টিমে মন্ত্রণালয়ের বা সংস্থারই কর্মকর্তার বউ-বাচ্চাসহ যাকে তাকে অন্তর্ভুক্ত করার অসংখ্য নজির আমরা দেখেছি। এটাও জনগণের অর্থের এক ধরনের তছরুপ ছাড়া কিছু নয়।
আর কোনো মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তাদের সফরের ব্যয় যদি ওইসব দফতরের সাথে ঠিকাদারি বা ব্যবসায়িক সূত্রে জড়িত কোনো প্রতিষ্ঠান বহন করে তাহলে সেটা অনৈতিক বলে আমরা মনে করি। কারণ এটা স্পষ্ট যে, টেন্ডারে বা অন্য কোনোভাবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা না পেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এই ব্যয় বহন করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।


আরো সংবাদ



premium cement