২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজনৈতিক বিক্ষোভে বলপ্রয়োগ নয়

গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে

-

পণ্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষের কাঁধে চেপে বসেছে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। একই সাথে নাগরিকরা সরকারের নানা অনিয়ম দুর্নীতি অগণতান্ত্রিক আচরণে অতিষ্ঠ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কয়েক দফায় এর প্রতিবাদে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করেছে। তবে ওইসব কর্মসূচিতে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে বাধা দিয়েছে। বহু স্থানে নির্দয়ভাবে মারধর করা হয়েছে, কোথাও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, এমনকি গুলি পর্যন্ত চালানো হয়। নারায়ণগঞ্জে দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক সদস্যের গুলিতে একজন প্রাণ হারান। সরকারের কঠোর বলপ্রয়োগের নীতি দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
জাতিসঙ্ঘসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরাম বারবার সরকারের প্রতি পরিস্থিতি উন্নতিকল্পে আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ দিতে বরাবরের মতো এখনো অনুদার সরকার।
তিন দিন আগেও জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদ বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিক্ষোভ দমাতে বল প্রয়োগ না করতে আহ্বান জানিয়েছে। গত সোমবার জেনেভায় পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে মানবাধিকারের বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল নাশিফ। এতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি দমনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন ঘিরে দেশটিতে মেরুকরণ হচ্ছে। এ সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার দিতে হবে। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। মানবাধিকার পরিষদ এমন সময় এই আহ্বান জানাল; যখন সারা দেশেই আন্দোলনকারীরা তীব্র বাধার মুখে পড়ছেন। বিএনপির শত শত নেতাকর্মী হামলায় আহত হয়েছেন। আক্রমণের শিকার হলেও তাদেরই আবার মামলার আসামি করা হচ্ছে। ফলে সারা দেশেই গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
মানবাধিকার পরিষদের সদ্য সাবেক প্রধান মিশেল ব্যাচেলের বাংলাদেশ সফরের সময় উদ্বেগ জানিয়ে গুম নিয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন। সোমবারের অধিবেশনে এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে সহায়তার কথা বলেছে। এবারও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে- মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার পরিবারের প্রতি প্রতিশোধ না নিতে; তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করতে। মানবাধিকার সংগঠক, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর চাপ প্রয়োগের নীতি বন্ধের কথাও অধিবেশনে বলা হয়।
জাতিসঙ্ঘের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ বাংলাদেশ। বৈশ্বিক সংস্থাটির শান্তিরক্ষী মিশনে বড় অবদান রাখছি আমরা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে। সংস্থাটির বক্তব্য অনেক সময় আমাদের দেশে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয় না। এর আগে মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। দেশের সংবাদমাধ্যম মন্ত্রীদের বক্তব্যের বরাতে ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এজন্য পরে জাতিসঙ্ঘ আলাদা করে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করে। এ অবস্থায় আমাদের উচিত একপেশে না হয়ে সততার নীতি গ্রহণ করা। অন্যথায় আরো বিতর্কিত হবে দেশের ভাবমর্যাদা। এতে কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
২০২৩ সালের শেষ নাগাদ দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে পর পর দু’টি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি বেশির ভাগ ভোটার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ দু’টি নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমন অবস্থায় সামনের নির্বাচন ফলপ্রসূ হওয়ার বিষয়ে সবপক্ষ এখন থেকে সতর্ক। বিগত সময়ে সরকার ঘোষণা দিয়ে গণতন্ত্রের পথ পরিহার না করলেও দমননীতি গ্রহণ করায় এখন সবাই চায়, রাজনৈতিক পরিবেশ সবপক্ষের জন্য যেন উন্মুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশিত। আমরা আশা করব, দেশের নাগরিকদের অধিকার পুরোপুরি ফিরিয়ে দেবে সরকার। মুক্ত পরিবেশে দেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটবে। বাংলাদেশ আবার ফিরবে সঠিক পথে।


আরো সংবাদ



premium cement