চিকিৎসা না খাদ্যব্যয় কোনটা কমাবে
- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা না খাদ্য, কোন খাতে ব্যয় কমাবে তা নিয়ে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। রীতিমতো উভয় সঙ্কটে পড়েছে তারা। কোনো খাতেই ব্যয় কমানো সম্ভব নয় মানুষের পক্ষে। জীবন ধারণের জন্য দু’টিই অপরিহার্য। তবু নিরুপায় হয়ে চিকিৎসা ব্যয় খানিকটা কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। এতে প্রতিদিন ওষুধ সেবন করতে হয়, এমন রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা হুমকিতে পড়ছে। ফলে দেশের জনস্বাস্থ্য প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি দেশে একসাথে ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। কোনো কোনো ওষুধের দাম শতভাগ বেড়েছে। এসব ওষুধের বেশির ভাগ অত্যাবশ্যক বা এসেনসিয়াল তালিকার। এ তালিকার ওষুধের দাম কোম্পানি নিজে থেকে বাড়াতে পারে না। সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে বাড়াতে হয়। সে কারণে বলা যায়, মূলত সরকারের সম্মতিতে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে কোনো কোনো পরিবারে ওষুধ কিনতে আগের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। কিন্তু বাড়তি টাকার জোগান কিভাবে আসবে কারো জানা নেই। দেশে বেশির ভাগ মানুষের আয় এক পয়সাও বাড়েনি। সীমিত আয়ের লোকের পক্ষে ওষুধ কেনা বাবদ বাড়তি ব্যয় কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের সামনে একটা পথ খোলা আছে- হয় ওষুধে ব্যয় কাটছাঁট করা, নয়তো খাবার কেনা কমিয়ে দেয়া। দু’টি জিনিস অতিপ্রয়োজনীয় হওয়ায় কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, ওষুধ কেনাসহ চিকিৎসা বাবদ ব্যয়ের ৬৮ শতাংশ ব্যক্তিকে নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বর্তমানে প্রত্যেককে চিকিৎসা ব্যয়ের ৭৪ শতাংশ নিজের পকেট থেকে বহন করতে হচ্ছে। বাকি ২৪ শতাংশ খরচ নাগরিকরা নানাভাবে পান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, চিকিৎসা ব্যয়ের ৩০ শতাংশের বেশি নিজের পকেট থেকে খরচ করলে ওই ব্যক্তি দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে খাবি খাবেন। সঙ্গত কারণে ৩০ শতাংশের বাইরে চিকিৎসার সব ব্যয় সরকারের বহন করা উচিত।
স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চিকিৎসায় ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশে প্রতি বছর ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ের বড় অংশ খরচ হয় ওষুধে। ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যয় আরো বাড়বে। ফলে সীমিত আয়ের মানুষকে আয়-ব্যয় সমন্বয় করতে গিয়ে বাধ্য হয়ে ওষুধের খরচ কমাতে হবে। এতে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়বে। পরিণতিতে ভবিষ্যতে সার্বিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আমরা মনে করি, ডলার এবং তেলের কারণে সম্প্রতি ওষুধের দাম বাড়ানোর কিছুটা যৌক্তিকতা ছিল; কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের যেখানে নাভিশ্বাস উঠেছে, সেখানে এ মুহূর্তে ওষুধের দাম না বাড়িয়ে কিছু দিন পরে বাড়ানো যেত। এ সময়ে সরকার ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নানাভাবে সুবিধা দিতে পারত। যেমন কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াত করা, যা প্রয়োগ করে এখনো ওষুধের দাম আগের অবস্থায় রাখা যেত। জনবান্ধব সরকারের দায়িত্ব এটিই। কিন্তু সরকার সব দায় জনগণের কাঁধে চাপিয়ে ভারমুক্ত থাকছে। ফলে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব না হয়ে দিন দিন আরো তীব্রতর হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় দেশে যে দুই ধরনের ওষুধের তালিকা রয়েছে; তা বাদ দিয়ে ফর্মুলাভিত্তিক মূল্য তালিকা করলে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো ওষুধের দাম বাড়াতে পারবে না। অতিপ্রয়োজনীয় সব ওষুধ অত্যাবশ্যক তালিকায় রেখে এগুলোর দাম যাতে না বাড়ে সে জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত। তা না হলে জনস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব পড়বে। অর্থনীতির চাকা শ্লথ হয়ে যাবে, সার্বিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা