২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
খাদ্য নিরাপত্তার আশঙ্কা

উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই

-

খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও যুদ্ধাবস্থার কারণে মূল্যস্ফীতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এটি কেবল আমাদের মতো দরিদ্র দেশের ক্ষেত্রে ঘটছে এমন নয়। অনেক উন্নত দেশের মানুষও একই পরিস্থিতির শিকার।
খাদ্য পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি নাগরিকের খাদ্যের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য উল্লেখ করার মতো। কিন্তু সম্প্রতি এ ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মহামারীর বিরূপ প্রভাব এবং নীতিগত দুর্বলতার কারণে এ অবস্থা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ুর বিরূপতাও। বন্যা ও অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর আউশ ও আমন ধানের আবাদ কমেছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। এর ফলে আউশ ও আমনে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হতে পারে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, খাদ্য নিরাপত্তার তিনটি প্রধান দিক হলো- খাদ্যের পর্যাপ্ততা, সহজলভ্যতা এবং যথাযথ ব্যবহার। আর বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সংজ্ঞায় আরেকটি দিক যুক্ত করা হয়েছে, সেটি প্রথম তিনটি উপাদানের স্থায়িত্ব। অর্থাৎ খাদ্যের পর্যাপ্ততা, সহজলভ্যতা ও যথাযথ ব্যবহার যেন স্থায়ীভাবে বিদ্যমান থাকে তা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঘাটতি আছে।
দেশে খাদ্য মজুদের পরিমাণ আশঙ্কাজনক নয়। কিন্তু বাজারে চালসহ সব ধরনের খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষ চরম সঙ্কটে পড়েছেন। চাহিদামতো খাবার সংগ্রহ করতে না পেরে অনেকে কম খেতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ দু-এক বেলা না খেয়ে থাকছেন। এদের কাছে খাদ্যের পর্যাপ্ত জোগান নেই, খাদ্য সহজলভ্য নয় এবং দেশে খাদ্যের যথাযথ ব্যবহারও হচ্ছে না। কেউ বেশি ভোগ করছেন, কেউ একদম পাচ্ছেন না। খাদ্যমূল্য বেড়ে গেলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে। খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রি বাড়ানোর মাধ্যমে শহর এলাকায় সঙ্কটের সাময়িক সুরাহা হলেও তা স্থায়ী সমাধান নয়। তাতে অপুষ্টি স্থায়ীভাবে দূর হয় না। দীর্ঘকালীন অপুষ্টির কারণ মূলত পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়া। অপুষ্টি থেকে রোগব্যাধির সৃষ্টি হয় এবং সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে। বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারিভাবে ১০ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অথচ এই মুহূর্তে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট চলছে।
নয়া দিগন্তের এ সম্পর্কিত এক রিপোর্টে একজন কৃষি অর্থনীতিবিদের বরাতে বলা হয়েছে, আমাদের আমদানির ওপর নির্ভর না করে নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ জন্য ধানের পাশাপশি শীতকালীন চিনা, কাউন, গম, ভুট্টা ও আলু আবাদে জোর দেয়ার পরামর্শ দেন ওই কৃষি অর্থনীতিবিদ। তিনি কৃষি উপকরণ বিশেষ করে সার ও ডিজেলের দাম কমানো এবং প্রয়োজনে ডিজেলে নগদ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করেন। কারণ, কৃষিতে ৮০ শতাংশ সেচ হয় ডিজেলে।
আউশ ও আমনের ফলন সত্যিই কম হলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়বে। কিন্তু ডলার সঙ্কটে আমদানিও সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটি কেবল ডলারের সঙ্কটের কারণেই নয়, বরং বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির কারণেও কঠিন হতে পারে। খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশগুলো সময়মতো খাদ্য বিক্রি করবে এমন নিশ্চয়তা নেই। ভারতের মতো বন্ধু দেশও সঙ্কটের সময় খাদ্য রফতানি বন্ধ রাখে। তাছাড়া সঙ্কট শুধু আমাদের একার নয়, অনেক দেশেরই এমন সঙ্কট আছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা পারব না। তাই অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement