২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আমন আবাদে বিঘায় ব্যয় বৃদ্ধি চার হাজার টাকা

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কেন?

-

নয়া দিগন্তের ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, (দেশের প্রধান খাদ্যশস্য) আমন ধান আবাদের চলতি মৌসুমে অতিবর্ষণ, অনাবৃষ্টি, জ্বালানির দাম বাড়ানো, শ্রমিকের জনবল সঙ্কট, নিত্যপণ্যের ঊর্র্ধ্বগতি প্রভৃৃতি সব কিছু মিলিয়ে চাষিরা মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। এগুলোর প্রভাবে ফসলের উৎপাদন ব্যয় যতটা বাড়বে, ফসলের মূল্য সে অনুপাতে কম পাওয়া নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তদুপরি, অনেকে ক্ষুদ্রঋণ বা চড়া সুদে টাকা নিয়ে ফসল আবাদ করছেন। এসব কারণে তাদের দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা কয়েক দিন যাবৎ ঘুরে কৃষক, জমির মালিক ও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারদের সাথে আলাপে জানা যায়, প্রধানত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এক বিঘা পরিমাণ জমির চাষ ও চারা রোপণে ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ পড়ছে। এটি গতবার ছিল এর চেয়ে অনেক কম। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, এখন অনেকেই গবাদিপশু ও লাঙ্গলের সাহায্যে আর জমি চাষ করছেন না। বরং আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে, অর্থাৎ ডিজেলচালিত মেশিনে চাষাবাদ আরম্ভ করেছেন। গতবারও এটি কঠিন ছিল না। তবে তেলের দাম সম্প্রতি বেড়ে যাওয়ায় দেড় থেকে দ্বিগুণ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের।
ভাণ্ডারিয়া উপজেলার কৃষি অফিস জানায়, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এক বিঘা জমি চাষে এখন তাদের ৫০ শতাংশ বেশি খরচ পড়ছে। কৃষিপণ্য, পরিবহন ও সেচ ব্যয় ৫০ শতাংশ এবং চাষাবাদের ব্যয় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিকের মজুরি ও বীজের দামও বেড়ে গেছে। জমির প্রতি বিঘায় তিন-চার হাজার টাকা ব্যয় বাড়ছে। দ্রব্যমূল্য আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে সমস্যাটি থেকে পার পাওয়া যায় না। স্থানীয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেছেন, ভাণ্ডারিয়ায় কৃষক আছেন ২৫ হাজার ২০০ জন। আমন চাষের জমির পরিমাণ ১০ হাজার ২০০ হেক্টর। আর এতে উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ধান ৩১ হাজার এবং চাল সাড়ে ২০ হাজার টন। প্রকৃতি বিরূপ না হলে এ টার্গেট পূরণের বিষয়ে তিনি আশাবাদী।
তিনি আরো বলেছেন, গত বছর টার্গেট কিছুটা কম থাকলেও তা পূরণ না হওয়ায় তেমন অসুবিধা হয়নি। এবার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে চাষিদের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক হতে পারে। ধান ছাড়াও সবজিতে এর প্রভাব পড়বে। এ রকম আর্থিক সঙ্কটে চাষবাস বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, তাদের ন্যূনতম পরিমাণ জ্বালানির নিশ্চয়তা থাকা চাই। ধানের প্রভাব পড়ে পুরো কৃষিতে। শেষ ভরসা কৃষি গেলে দেশের কিছু থাকবে না। করোনার ছোবলে দেশ যখন থমকে ছিল, তখনো কৃষি ছিল চালু। সেই কৃষি বড়ই সঙ্কটে।
অবিলম্বে জ্বালানিমূল্য যৌক্তিক করা হবে বলে আমরা মনে করি। অন্যথায় কৃষির সমস্যা বাড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement