প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতনতা প্রয়োজন
- ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
বাংলাদেশে গত এক দশকে ঝড়, বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল থেকে শুরু করে আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টির সময় মাঠে-ঘাটে, ক্ষেত-খামারে কাজ করা মানুষ বজ্রপাতে মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বজ্রপাতে এক পরিবারের তিনজনসহ ৯ জন মারা গেছেন। নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই দিন বিকেলে উপজেলার পঞ্চক্রোশি ইউনিয়নের মাটিকোড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। হতাহত সবাই কৃষি শ্রমিক। মাঠে রোপা ধানের চারা উত্তোলন ও জমিতে বপন করছিলেন তারা। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে সবাই মাঠে অবস্থিত একটি শ্যালোমেশিন ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন। এ সময় শ্যালোমেশিন চালু ছিল। তখন বজ্রপাত হলে সেখানে আশ্রয় নেয়া নারীসহ ঘটনাস্থলে পাঁচজন নিহত হন। গুরুতর আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পর আরো চারজন নিহত হন। আহত আরো আটজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জলবায়ু পরিবর্তন, বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়া, বড় বড় গাছ কাটা ও বৈদ্যুতিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধিতে বজ্রপাত ও অন্যান্য ক্ষতি দুই-ই বেড়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, দেশে গাছপালা কমে যাওয়ায় দক্ষিণ থেকে আসা গরম আর উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে আবহাওয়ার অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে আকাশে বজ্রমেঘ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় একটি মেঘের সাথে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রপাত হয়। ওই সময় উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায় তাতে আঘাত হানে। বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে জুনের মধ্যে অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে বজ্রপাত বেশি হয়। কালবৈশাখীর সাথে তীব্র বজ্রপাতে এ সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
ইদানীং বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়ে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়লেও আবহাওয়া নিয়ে কাজ করা সরকারি সংস্থার তৎপরতা তেমন নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যেও বজ্রপাত নিয়ে সচেতনতার বড় অভাব লক্ষণীয়। বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠ বা গাছতলার চেয়ে বেশি নিরাপদ হলো টিনের চালাযুক্ত বাড়ি বা গাড়িতে বসে থাকা। কারণ, টিনের চাল বা গাড়ি তড়িৎপর্দার মতো কাজ করে, যেখানে বাজ হানা দিতে পারে না। তাই গ্রামে যারা থাকেন তাদের বজ্রপাতসহ বৃষ্টির সময় বাড়িতে থাকা উচিত। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে শহরে ও মফস্বলে দোতলার চেয়ে উঁচু বাড়িগুলোয় বজ্রনিরোধক লাগানো বাধ্যতামূলক করা উচিত।
জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে গড়ে প্রতি বছর আড়াই হাজারের মতো বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর এর থেকে শতগুণ বেশি বজ্রপাত হয়, অথচ সেখানে মৃত্যু হয় ৪০-৫০ জনের। ভারতের কর্নাটকে বজ্রপাতের ৩০-৪৫ মিনিট আগে সতর্কতামূলক এসএমএস দেয়া হচ্ছে। ভিয়েতনামে টাওয়ার নির্মাণ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বজ্রপাতের মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। আমরাও সেগুলো অনুসরণ করতে পারি।
ঝড়, বৃষ্টির মতো বজ্রপাতও প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও দূষণে বায়ু ভেদ্য হয়ে পড়ায় তা লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরও দায় কম নয়। বলা যায়, সাধারণভাবে বায়ুদূষণ কমাতে পারলে বজ্রপাত কমবে। একই সাথে বজ্রপাতে মৃত্যু কমিয়ে আনতে হলে সারা দেশে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। বজ্রপাতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে বনভূমির পরিমাণ বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমাদের প্রকৃতির সাথে সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সখ্য গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন ডিভাইস ইনস্টলেশন, হাওরাঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার জনগণকে সতর্ক করতে হবে সবার আগে।
মনে রাখা আবশ্যক, জনসাধারণকে সহজ সাবলীল ভাষায় বুঝবার মতো করে করণীয়গুলো উপস্থাপন করতে হবে। যাতে বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সেসব করণীয় তাদের মন-মগজে গেঁথে যায়। কারণ তারা নিজেদের করণীয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা