২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সার নিয়ে রসাতল

কৃষকের ভোগান্তি কমান

-

দেশে আমন মৌসুমের চাষাবাদ পুরোদমে শুরু হয়েছে। দীর্ঘ খরার কারণে এবার চাষাবাদ শুরুতে দেরি হয়। সেচের জন্য অত্যন্ত জরুরি জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় এমনিতে বাড়তি ব্যয়ের চাপ রয়েছে। নগদ টাকা ব্যয় করে সবার পক্ষে যথেষ্ট সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন তার সাথে যোগ হয়েছে দেশজুড়ে সারসঙ্কট। কৃষক চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না। আবার সরকারের নির্ধারিত দামেও পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের সার কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। কোথাও কোথাও দিনের পর দিন ডিলারের পেছনে ঘুরে ও বাড়তি দাম দিয়েও সার পাচ্ছেন না তারা।
সার না পেয়ে কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা ডিলারের দোকান ঘেরাও করেছেন, মিছিল করেছেন। কোথাও সড়ক অবরোধ করেছেন। তাতে এখন পর্যন্ত খুব একটা কাজ হয়েছে এমন নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সারের ঘাটতি নেই। চাহিদার চেয়ে মজুদ বেশি আছে। সরবরাহও যথেষ্ট বলে অনেক জায়গায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে; কিন্তু বাস্তবতা এটিই যে, সার নিয়ে কৃষকের ভোগান্তি চলছে। সার সংগ্রহে ও দামের দিক থেকে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সুতরাং সমস্যা আছে এটি অস্বীকার করে লাভ নেই।
সার সরবরাহ ব্যবস্থা অর্থাৎ সারের ডিলারশিপ প্রায় পুরোপুরি সরকারি দলের সাথে সম্পর্কিত স্থানীয় ব্যক্তিদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে। তাদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি যথেষ্ট। নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে কৃষকের পকেট কাটা তাদের মজ্জাগত। চালের দামের ক্ষেত্রে যেমনটি দেখা গেছে মিলারদের মধ্যে। এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের তেমন কিছু করার থাকে না। চালের দাম আকাশ ছুঁঁলে খাদ্যমন্ত্রী অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, মিলারদের বিশ^াস করে তিনি ভুল করেছিলেন।
সারা দেশ থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, ইউরিয়া সারের দাম প্রতি কেজি ২২ টাকা হলেও ডিলাররা কৃষকের কাছে বিক্রি করছেন ২৫ থেকে ২৬ টাকায়। এমওপির (মিউরেট অব পটাশ) দাম ১৫ টাকা কেজি। কৃষককে নিতে হচ্ছে ২৪ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে। তারপরও পাচ্ছেন না। কৃষক সার না পেলে ও পদে পদে দুর্ভোগের শিকার হলে বিরূপ প্রভাব পড়বে আমন আবাদে। ফলন কমে যাবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক গত জুলাই মাসে বলেছিলেন, দেশে সারের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। প্রয়োজনে ভর্তুকি বাড়িয়ে সারের জোগান ঠিক রাখা হবে এমন কথাও বলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি বলেন, সারের সঙ্কট না থাকলেও সরবরাহ বাড়ানো দরকার। সেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আবার গ্যাস সঙ্কটের কারণে দেশের দু’টি বৃহত্তর সারকারখানা সাময়িক বন্ধ থাকাও সারের সরবরাহ কম হওয়ার কারণ। তবে মাঠপর্যায়ে বর্তমান সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে মূলত ডিলারদের কারণে। তারা অবৈধ মুনাফার লোভে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া হিসেবে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করছেন, যাতে কৃষক বাড়তি দামে সার কিনতে বাধ্য হন।
সঙ্কটের একটি ভিন্ন প্রকৃতিও আছে। জামালপুরের কৃষকরা সার নিয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের পর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সারের সঙ্কট নেই। কিন্তু কৃষকদের মধ্যে কেন যেন একটি ভয় কাজ করছে যে, তারা সার পাবেন না বা অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনতে হবে। এমন শঙ্কা থেকে তারা সার বিক্রির খবর পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
আমাদের ধারণা, এটি সরকারি ব্যবস্থাপনার ওপর মানুষের আস্থাহীনতার বহিঃপ্রকাশ। গত এক যুগে দেশে করোনার টিকাই হোক বা বয়স্কভাতাই হোক- কোনো কিছুরই বিতরণ সুষ্ঠুভাবে হওয়ার দৃষ্টান্ত নেই। সার নিয়ে সামাজিক মনস্তত্ত্ব তাই আস্থাহীনতায় গড়িয়েছে। কিন্তু সার বিতরণ সুষ্ঠু না হলে ধানের ফলনে ঘাটতি হবে। সেটি কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না। তাই সার দিয়ে কৃষকের ভোগান্তি লাঘবে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement