২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি

শিক্ষার পরিবেশ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ

-

বিগত এক যুগে ছাত্ররাজনীতির সুফল কী? এই প্রশ্নের সম্ভবত একটি উত্তরও নেই। যদি প্রশ্ন করা হয়, একই সময় এর কুফল কী? তার সুনির্দিষ্ট উত্তর রয়েছে। এমনকি তা বলে শেষ করা যাবে না। রাজনীতি করে দেশের জন্য ছাত্ররা কোনো মঙ্গল দূরে থাক, নিজেদের জন্যও এ সময় তারা কোনো কল্যাণ করতে পারেনি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বরং এ সময় হাজারো অঘটন ঘটেছে যা তাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চলবে কিনা, এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের সতর্ক অবস্থান দেখে অনুমান হচ্ছে তারা ভয় পাচ্ছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজনীতির কালো ছায়া তাদের শিক্ষার মসৃণ পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের কমিটির বার্ষিক সম্মেলন করেছে গত শনিবার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠন করার অনুমতি না থাকলেও ছাত্রলীগ আগে থেকে কমিটি ঘোষণা করে তাদের কার্যক্রম সেখানে চালাচ্ছে। এবার এই সম্মেলনে একসাথে ১৬টি কমিটি ঘোষণা করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, অভিভাবক ও ছাত্রদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সামাজিক মাধ্যমে তাদের মধ্যে পারস্পরিক মতবিনিময়ের যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বিগ্ন।
এতদিন অন্তত দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্তান পাঠিয়ে অভিভাবকরা নিশ্চিন্ত ছিলেন। কারণ, সেখানে বেশি অর্থ ব্যয় হলেও নিয়মিত পাঠদান চলে। কর্তৃপক্ষের একটি দায়বোধ রয়েছে। প্রাণহানি কিংবা শিক্ষাজীবন বিনষ্টের আশঙ্কা দেখা যায়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষা সমাপ্ত করার একটি সংস্কৃতি চালু রয়েছে। অনেকের পক্ষ থেকে এখন আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে যে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজনীতির কালো ছায়া এখানে বিস্তৃত হলে সেই পরিবেশ আর থাকবে না। বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাদের সতর্কতা প্রকাশ করেছে। ছাত্ররাজনীতি কোনো সুফল বয়ে আনবে না বলে অনেকে মনে করছেন। তারা অভিভাবক ও ছাত্রদের সাথে মিলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। এ দিকে ছাত্রদের পক্ষ থেকে অনেকে নির্বিঘœ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখাই প্রয়োজন মনে করছেন।
‘ছাত্ররাজনীতি সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। সচেতন মানুষ হতে হলে, সুনাগরিক গড়ে তুলতে হলে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন।’ এমন কথা বলে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চালুর পক্ষে যুক্তি দেয়া হচ্ছে। অথচ বিগত ১৩ বছরে আমরা যদি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি চর্চা দেখি, তা বড় হতাশার চিত্র আমাদের সামনে হাজির করে। বুয়েটে রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে। বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ। সারা দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে আরো অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। এমনকি তাদের অন্যায় অনিয়ম ও জোর প্রয়োগ সহ্য করতে না পেরে শিক্ষকের প্রাণও গেছে। সিলেটে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ছাত্রাবাস ব্যবহৃত হয়েছে চাঁদাবাজি সন্ত্রাসের কাজে। সেখানে স্বামীকে বন্দী করে তারা স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাও ঘটিয়েছে। ক্যাম্পাসে এই সময়ে এ ধরনের অসংখ্য অপকর্মের উদাহরণ দেয়া যাবে। ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলের দায় মেটাতে হয় অন্যদের। নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধে বন্ধ করে দেয়া হয় পুরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমন ঘটনা সারা দেশে একেবারে সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। ছাত্ররাজনীতি না থাকলে অন্তত এ বিপুল ক্ষতি থেকে জাতি বেঁচে যেত।
নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার থাকা গণতান্ত্রিক সমাজে বাঞ্ছনীয়। ছাত্রদের জন্য সেটি আরো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার জন্য দরকার একটি উন্মুক্ত পরিবেশ। যেখানে সব মত-পথের মানুষের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সেটি না হয়ে একটি চক্রের কাছে সবাই জিম্মি হয়ে গেলে তা আর রাজনীতি থাকে না। অন্ততপক্ষে এ ধরনের অবস্থা থেকে আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত থাকুক, এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টরা করতে পারে। তাদের এই অধিকারের প্রতি সবার সমর্থন থাকা উচিত। অন্তত ক্ষয়ে যাওয়া ছাত্ররাজনীতির চেয়ে শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অধিক গুরুত্বপূর্ণ।


আরো সংবাদ



premium cement