২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
তদারকির অভাবে সারের উচ্চমূল্য

সার বিক্রি কেন সুষ্ঠু নয়?

-

সহযোগী জাতীয় দৈনিকের মেহেরপুর প্রতিনিধি তার পাঠানো এক প্রতিবেদনে জানান, চড়ামূল্যে গুরুত্বপূর্ণ ইউরিয়া সার কিনতে হচ্ছে গরিব কৃষকদের। এ সারের সঙ্কটের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন দাম হিসেবে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী ‘অন্যান্য সার নিলেই ইউরিয়াও দেয়া হবে’ বলে অন্যায় শর্ত আরোপ করছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয়, মনিটরিং সঠিক না হওয়ায় অসৎ সার ব্যবসায়ীরা বেশি দাম নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিকে প্রশাসন বলছে, সারের কোনো সঙ্কট নেই এবং মনিটরিং চলছে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক। জানা যায়, গাংনী উপজেলাতে ১২ জন বিসিআইসির, ৩২ জন বিএডিসির ডিলার ছাড়াও খুচরা সার ব্যবসায়ী (অনুমোদিত) আছেন ১৭ জন। গত মাসে (আগস্ট) ডিলারদের চাহিদা ছিল ১৪৪২ মেট্রিক টন ইউরিয়া। সে অনুসারে এর বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ডিলাররাই সার সরবাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার এখানে ১২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান এবং সাড়ে ৩০০ হেক্টর আগাম রবি মৌসুমের সবজি আবাদের টার্গেট নির্ধারিত রয়েছে। সারের চাহিদা সে মোতাবেক। ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিলাররা চাহিদা অনুসারে সার তুলেছেন। বিসিআইসির জনৈক ডিলার জানালেন, ‘চাহিদা অনুসারে সার পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিস এবং গাংনীর ইউএনওকে জানানোর পরই সার বিক্রি শুরু হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারেই এটা হচ্ছে। সারের সুসম বণ্টন নিশ্চিত করা হচ্ছে। কেউ অতিরিক্ত ইউরিয়া সার চাইলেও পাচ্ছে না। গ্রামে খুচরা বা অনুমোদনহীন কোনো প্রতিষ্ঠান বেশি দামে সার বিক্রি করলে এর দায়ভার বিসিআইসির কোনো ডিলার নেবে কেন?’ অন্য দিকে, বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের থেকে জানা যায়, ইউরিয়া কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক দেয়া হয় না। এর সঙ্কটের কথা বলে অনেকেই বেশি দাম চাইছেন। দাম বেশি দিলেও ক্যাশ মেমো মেলে না চাষির ভাগ্যে। আবার ডিলাররা অন্যায় শর্ত জুড়ে দেন, অন্যান্য সার নিলেই ইউরিয়া সার নেয়া যাবে। গ্রামের খুচরা কারবারিরা বেশি বেপরোয়া। তারা বাকিতে বেচার সুযোগে সারের দাম নেন বেশি। কেউ কেউ দাবি করছেন, সারের সঙ্কট সৃষ্টির তেমন যুক্তি নেই। আসলে চাষাবাদের সার ব্যবহৃত হচ্ছে মাছের চাষে। ফলে সার পর্যাপ্ত পাওয়া গেলেও ভোক্তার কাছে সরবরাহে সঙ্কট সৃষ্টি হয়। আবার যারা ব্যবসায়ী নন, তারাও বেশি পরিমাণে সার কিনে গোপনে মজুদ রাখেন এবং বেশি দামে বেচেন। কৃত্রিম সার সঙ্কটের এটাও একটা বড় কারণ।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার জানিয়েছেন, এখানে সারের চাহিদা এক হাজার ৪৪২ মে. টন। সে হিসাবে ডিলাররা এবার সার পেয়েছেন। কৃষকদের সার সঙ্কট না হতে মনিটরিং করা হচ্ছে। এ জন্য একজনকে অর্ধলাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। উপসহকারী কৃষি অফিসারদের সাথে বৈঠক করে বেআইনি সারের ব্যবসা ও এর মজুদ চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইউএনও বলেছেন, ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে তাদের হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে এবং সারের মনিটরিং চলছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয়। কয়েকজন দণ্ডিত হয়েছে। এ অভিযান ও মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।
আমরা আশা করি, সার বিক্রি সুষ্ঠু করার জন্য সব পদক্ষেপই কর্তৃপক্ষ গৃহণ করবে। অন্যথায়, সার সঙ্কট চরম আকার ধারণ করতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement