২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ঋণখেলাপিদের উপর্যুপরি সুবিধাদান

ঋণ আদায়ে প্রভাব ফেলবে

-

দেশের জনগণের টাকা নানাভাবে অপচয় হচ্ছে। যে যেভাবে পারছে লুটে নিতে ব্যস্ত। বিশে^র সর্বোচ্চ ব্যয়ে সরকারি নির্মাণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মতো ঘটনাগুলোর পেছনে লুটপাট ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। দুর্নীতি বা অনিয়ম রোধে বা জনগণের অর্থের পাইপাই হিসাব রাখার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকারি খাতে যেন অর্থ নয় ছয়ের জোয়ার চলছে।
ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ফিরিয়ে দিতে হয় সেই নিয়মটিই এখন একেবারে শিথিল। এখন আর ঋণের টাকা ফেরত দেয়ার মানসিকতা নেই ঋণগ্রহীতাদের। ঋণখেলাপিদের যেভাবে বারবার সুবিধা দেয়া হচ্ছে; তাতে সাধারণের মনে এমন ধারণার সৃষ্টি হতে পারে যে, ঋণ পরিশোধ না করা কোনো অপরাধ নয়। বরং ঋণখেলাপিদের ধরতে যাওয়াই অপরাধ। কারণ, তারা ঋণ নিয়ে দেশের উন্নয়ন করেন। শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন। কর্মসংস্থান করেন, অবকাঠামো গড়েন, বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন। সুতরাং ঋণখেলাপি হলেও তারা দেশের সম্পদ। বরং তাদের আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে খুশি রাখতে হবে, যাতে নাখোশ হয়ে তারা আবার হাত গুটিয়ে না নেন। তেমন হলে দেশের অভাগা মানুষের কী হবে!
গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফের ঋণখেলাপিদের জন্য বিশেষ বর্ধিত সুবিধা ঘোষণা করেছে। এ সুবিধার আওতায় খেলাপিরা নামমাত্র অর্থ জমা দিয়ে পরপর চারবার ঋণ নবায়ন করে নিতে পারবেন। চারবারে মোট ২১ বছর সুযোগ পাবেন ঋণ পরিশোধ না করার। শুধু তা-ই নয়, চারবার খেলাপি হলেও নতুন করে ঋণ পাবেন। আর খেলাপি হলে নির্বাচন করার অধিকার হারানোসহ যেসব ছোটখাটো প্রতিবন্ধকতা ছিল সেগুলো আইনের ফোকর গলিয়ে পাশ কাটানোর কায়দা তো থাকছেই। ঋণ পুনঃতফসিল করা থাকলেই সেটি সম্ভব। অদূরভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে- দাবি উঠছে, ঋণখেলাপি শব্দটা মানহানিকর, এটি বাতিল করতে হবে।
সর্বশেষ সুবিধার আওতায় প্রথমে ছয় বছর ও পরের তিনবারে পাঁচ বছর করে সর্বমোট ২১ বছর ঋণ নবায়ন করতে পারবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপিরা। ঋণ নবায়নের জন্য আগে পরিশোধ করতে হতো ঋণের ২০ শতাংশ অর্থ, এখন সেটি করতে হবে আড়াই থেকে ৬ শতাংশ। আগে ঋণ নবায়নের কঠোর শর্তের কারণে গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হতেন। ব্যাংকের এককালীন বড় অঙ্কের অর্থ আদায় হতো। এখন সেটি উঠে গেল। ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ব্যবস্থায় ঋণ আদায় কমবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে টাকার সঙ্কট বেড়ে যেতে পারে। এটি বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে, ব্যাংকগুলো তাদের আমানতকারীদের অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার সক্ষমতা হারাবে। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে ভয় পাচ্ছে এমন কিছু আলামত সম্প্রতি দেখা গেছে। ডলার কিনে রাখার সাম্প্রতিক প্রবণতা সম্ভবত ওই সংশয়ের ফল।
বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের যে ঢালাও সুবিধা দিয়েছে তা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেছে একটি মানবাধিকার সংগঠন। এটি একটি গণমুখী উদ্যোগ। জনগণের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। অন্তত একটি সংগঠন এগিয়ে এসেছে তাওবা কম কী! আমরা রিটের ফলাফল দেখার অপেক্ষায় রইলাম।


আরো সংবাদ



premium cement