২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মিয়ানমারের গোলা বাংলাদেশে

এটি গ্রহণযোগ্য নয়

-

মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দু’টি গোলা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়েছে। গত শনিবার সকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় গোলা পড়ার ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মাত্র এক মাসের মধ্যে এ ধরনের তৃতীয় ঘটনা এটি। আগেও গত ২০ ও ২৮ আগস্ট এভাবে মিয়ানমারের মর্টার শেল বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তমব্রু এলাকায়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, পরপর এ ধরনের ঘটনায় সীমান্তের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। তারা নিরাপত্তাঝুঁকিতে আছেন। জানা যাচ্ছে, সীমান্তের বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সীমান্তসংলগ্ন পাহাড়ে জুম চাষ করতে যেতে পারছেন না অনেকে।
সর্বশেষ যুদ্ধবিমানের গোলা পড়ার পর সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তাদের ডেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হবে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সকাল সাড়ে ৯টায় তুমব্রু সীমান্তের রেজু আমতলী বিজিবি বিওপির আওতাধীন সীমান্ত পিলার ৪০-৪১-এর মাঝামাঝি স্থানে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দু’টি যুদ্ধবিমান এবং দু’টি ফাইটিং হেলিকপ্টার টহল দেয়। সে সময় যুদ্ধবিমান থেকে ৮-১০টি গোলা ছোড়া হয়। এ ছাড়া হেলিকপ্টার থেকেও আনুমানিক ৩০-৩৫টি গুলি করতে দেখা যায়। যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দু’টি গোলা সীমান্ত পিলার ৪০ বরাবর আনুমানিক ১২০ মিটার বাংলাদেশের ভেতরে এসে পড়ে। স্মরণযোগ্য যে, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াই চলছে। বিষয়টি দেশটির অভ্যন্তরীণ সমস্যা। এ নিয়ে বাংলাদেশের বলার কিছু নেই। যদি না সেটি আমাদের নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে ওঠে।
আমাদের ভূখণ্ডে মিয়ানমারের গোলা এসে পড়া নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের। এমনিতে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর উপস্থিতি আমাদের আর্থসামাজিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে আছে। এটি আমাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও যেকোনো সময় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে এখনো তেমন কোনো জটিলতা দেখা না দিলেও সীমান্তের ওপারের ঘটনাবলি আমাদের দেশে প্রভাব ফেলার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে কেউ যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বারবার গোলা এসে আমাদের ভূখণ্ডে পড়বে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আগের ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘কড়া’ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তখন পররাষ্ট্র সচিব বলেছিলেন, মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে মৌখিক নোটের মাধ্যমে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ যেতে না যেতে আবার মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। বাংলাদেশের সীমান্তে একাধিক মর্টার শেল নিক্ষেপের বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখতে হবে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, মিয়ানমারের কোনো উসকানিতে আমরা পা দেবো না। একটি আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, মিয়ানমার উসকানি দিচ্ছে। কেন এবং কী উদ্দেশ্যে এ উসকানি সে ব্যাখ্যা দেয়া উচিত। কারণ দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে জনগণকে না জানানো বিবেচনাপ্রসূত নয় বলেই আমরা মনে করি। বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বের সাথে নেয়া এবং সত্যিকারের কঠোর প্রতিবাদ জানানো হবে এটাই প্রত্যাশিত। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে, যাতে মিয়ানমারের ওপর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চাপ তীব্রভাবে সৃষ্টি হয়।


আরো সংবাদ



premium cement