লাগামহীন প্রকল্প ব্যয়
- ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্পে কেনাকাটায় জিনিসপত্রের দামে লাগাম টানা হচ্ছে না। একই সাথে উন্নয়নের ধীরগতি ও দফায় দফায় সময় বাড়ানোয় প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে অত্যধিক, যে কারণে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে অপচয় হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বিপুল অর্থ। এই অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে গুটিকয় মানুষ। বাস্তবে দেশে উন্নয়নের নামে যেন চলছে রাষ্ট্রীয় অর্থের ‘হরিলুট’। ফলে দুর্নীতির বিস্তার অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। লক্ষণীয়- প্রকল্পের প্রস্তাব থেকে দুর্নীতির শুরু। পরিণতিতে দেশে ঘটতে পারছে বালিশকাণ্ড, পর্দা কেলেঙ্কারি, পুকুর খনন নিয়ে লুটপাট ইত্যাদি। এবার ঢাকার সড়কে এলইডি বাতি স্থাপনে অস্বাভাবিক ব্যয়ের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন রাস্তায় এলইডি লাইট কেনার প্রকল্পে নতুন করে দাম নির্ধারণে ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নতুন করে এক হাজার ৯১৩টি এলইডি লাইট সংযোগে খরচ ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা। প্রতিটি বাতির পেছনে ব্যয় হবে ৭৫ হাজার ৫০ টাকা। প্রকল্পের শুরুতে প্রথমে প্রতিটি বাতিতে খরচ ধরা হয় ৪৪ হাজার ৩৩৩ টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে- ডিএনসিসির সড়কে বাতির সঙ্কট। সড়কে ৪২ হাজার ৪৫০টি বাতি স্থাপনে ৪৪২ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচের একটি প্রকল্প একনেক থেকে ২০১৭ সালে অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, দুই বছরে প্রকল্পটি শেষ করার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবায়নে ধীরগতিতে প্রকল্পটির মেয়াদ এক দফা বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চার বছরের মধ্যে শেষ করার কথা। এখন সেই সময়ও বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হচ্ছে। ফলে পাঁচ বছর লাগবে সড়কে বাতি স্থাপন করতে। ডিএনসিসির তথ্য অনুযায়ী, আটটি প্যাকেজের আওতায় ২৮ হাজার ১৮৫টি সড়কবাতি ২০২০-২১ অর্থবছরে স্থাপন করা হয়। তিনটি প্যাকেজের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তিনটির কাজ ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। একটির কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাব আনা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের পর্যালোচনায় জানা গেছে, মূল অনুমোদিত প্রকল্পে মোট লাইট ধরা হয় ৪২ হাজার ৪৫০টি। দ্বিতীয় সংশোধনে ছয় হাজার ৩৬২টি বাড়িয়ে ৪৮ হাজার ৮১২টি করা হয়। এখন নতুন প্যাকেজের আওতায় আবার এক হাজার ৯১৩টি লাইট যুক্ত করতে বলা হচ্ছে। অথচ ওই চার হাজার ৪৪৯টি অতিরিক্ত লাইট কোথায় ব্যবহার করা হবে তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। এ দিকে সড়কে এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে পেট্রল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট খাতে ৫৪.৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল, যা দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে বাড়িয়ে এক কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ এ খাতে ব্যয় বাড়ানো হয় ৫৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বা দ্বিগুণেরও বেশি। অপর দিকে, যানবাহনের সংখ্যা (ডাবল কেবিন পিকআপ) ১০ থেকে কমিয়ে পাঁচ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় এ অংশে ব্যয় বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ডিএনসিসির আওতাধীন সড়কে বাতি স্থাপনের প্রকল্পে নতুন করে একেকটি বাতি স্থাপনে যেভাবে ৭৫ হাজার ৫০ টাকা ধরা হয়েছে, তা যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে। এটি অস্বাভাবিক খরচ বলে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাজারদরের তুলনায় এই ব্যয় আজগুবি। তাই যাচাইয়ের পর প্রকৃত খরচের সাথে প্রস্তাবিত ব্যয়ের সঙ্গতি পাওয়া না গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ের লাগাম টানা অসম্ভব ও অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা আদৌ সম্ভব নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা