২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অর্থনৈতিক সঙ্কট সহসা কাটছে না

সংসদে আলোচনা ইতিবাচক

-

বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। দেশবাসীকে এমন আশ^াস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সে জন্য যা যা করা দরকার সরকার তা করে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক খাতে যে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে, তা মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা সম্ভবত এই প্রথম স্বীকার করা হলো। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপদে পড়তে হয়েছে।
জাতীয় সংসদে দেশের অর্থনীতির ওপর সাধারণ আলোচনা হয়েছে। এটিও ইতিবাচক দিক। কারণ কথা বলতে পারলে মানুষের অনেক মনোকষ্ট আপনাআপনিই লাঘব হয়। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বাইরে বাধাহীনভাবে সভা-সমাবেশ করতে না পারলেও সংসদে দু’চার কথা বলতে পারলেন- এটিই তাদের জন্য সান্ত¡না।
বিরোধী দলের সদস্যরা বলেছেন, বর্তমান সঙ্কটাবস্থা তৈরি হয়েছে সরকারের ভুল নীতি, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে। তারা জ্বালানি খাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গত এক যুগের বেশি সময়ে কিভাবে লাখো কোটি টাকা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় দিয়েছে সরকার সেই দৃষ্টান্ত উল্লেøখ করে তারা বলেন, এগুলো সরকারের ভ্রান্ত নীতি। সরকারি দলের সদস্যরা মূলত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সম্পূরক কথাবার্তা বলেছেন।
তবে দেশের অর্থনীতি যে ভালো নেই তার অনেক প্রমাণ প্রতিদিনই বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে বলছেন। গণমাধ্যমের খবরেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়নে নেমেছে এবং তা আগামী সপ্তাহে ৩৮ বিলিয়নে নেমে যাবে- এমন তথ্য আসছে। ডলারের অভাবে এলসির দায় শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিদেশী ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে, কিস্তির টাকা শোধ করতে না পারায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে এমন খবর এসেছে।
বাজারে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। সরকারিভাবে ৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সেটি করলেই যে সব কিছু নির্ধারিত দামে বিক্রি হবে এমন নিশ্চয়তা কে দেবে? দেশে এমন কোনো নজরদারি ব্যবস্থা নেই। থাকলে ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াতে পারতেন না। পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে আশাবাদী হওয়ার অবকাশ কম। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যেমনটা বললেন, বাংলাদেশের অবস্থা এক ইঞ্জিনে চলা অ্যারোপ্লেনের মতো। যেটি বেশি দূর যেতে পারে না। কিছু দূর চলার পর রানওয়ে খুঁজতে থাকে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতির চার ধরনের বিচ্যুতির কথা বলেছেন তিনি। এগুলো হলো- ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না হওয়া, রাজস্ব সংগ্রহে দুর্বলতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বৈষম্য। তার মতে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে এখন যে অস্থিরতা চলছে, তা সহসাই কাটবে না। ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকবে।
উন্নয়নের যে ঢাক সরকারি পর্যায়ে পেটানো হতো সেই ঢাক যে ফেটে গেছে তার প্রমাণ, ঢাকের সেই শব্দ আর শোনা যাচ্ছে না। এখন তারা বৈশি^ক সঙ্কটকে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু সচেতন মানুষ সেই কৌশলের সাথে পরিচিত। আর সাধারণ মানুষ যারা অর্থনীতির জটিল হিসাব-নিকাশ বোঝেন না, তারা প্রতিদিন বাজারে গিয়ে চাহিদামতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে না পেরে ফিরে আসার যন্ত্রণা থেকে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন দেশ কোন উন্নয়নের গাড়িতে উঠেছে।
একজন এমপি সংসদে বলেছেন, সিঙ্গাপুরের দিকে রওনা দিয়ে আমরা কেন যেন শ্রীলঙ্কার দিকে যাত্রা শুরু করলাম! সরকারের আচরণ বলছে, দেশের অর্থনীতি গভীর সঙ্কটে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছে ঋণ চাওয়া, বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা, নানাভাবে সরকারের ব্যয় সঙ্কোচন নীতি সঙ্কটের তীব্রতা নির্দেশ করে।


আরো সংবাদ



premium cement