ফিরে আসুক হারিয়ে যাওয়ারা
- ৩১ আগস্ট ২০২২, ০০:০৫
একজন মানুষ পরিবার ও সমাজ থেকে হারিয়ে যাওয়ার চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কিছু হতে পারে না। মানুষটি মারা গেলে কিংবা তাকে হত্যা করা হলেও শোকের একটা মেয়াদ থাকে। তারপর ওই ব্যক্তির বিষয়ে ঘনিষ্ঠদের ভাবনার অনেকটাই সমাপ্তি ঘটে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। অনেকের লাশ পাওয়া গেছে। বাকিদের ব্যাপারে পরিবারের সদস্যরা জানে না তাদের কী পরিণতি হয়েছে। তারা বলছেন, ‘আমার বাবা’, ‘আমার সন্তান’ ও ‘আমার স্বামীকে’ যদি মেরে ফেলে থাকেন তাহলে লাশটা অন্তত দেখান, একটু ছুঁয়ে দেখব, আমরা কবর দেবো।
বাংলাদেশে সংঘটিত এমন নিখোঁজের ঘটনাগুলো জাতিসঙ্ঘের ভাষায় ফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স বা গুম। এ দিকে গুম বলতে কিছু নেই বললেও জাতিসঙ্ঘের দেয়া তালিকা থেকে ১০ জনের খোঁজ মিলেছে বলে জানিয়েছে সরকার। এদের ছয়জনের সাথে একটি দৈনিক সম্প্রতি কথা বলেছে। পত্রিকাটি জানাচ্ছে, তাদের পাঁচজন বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাদের আটক করা হয়েছিল। এদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর নিজের এক সদস্যও ছিল। তিনি জানান, তাকে দুইবার গুম করা হয়।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ সরকারকে ৭৬ জনের তালিকা দিয়েছে। তাদের মধ্যে বাকি ৬৬ জনের এখনো হদিস নেই। বিদেশী এক গণমাধ্যমের রিপোর্টে, গুমের শিকার কয়েকজনের ভাষ্যমতে গোপন এক বন্দিশিবিরে আরো বন্দী আছেন। জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন প্রধানের কাছে সরকার গুমের তিনটি কারণ জানিয়েছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ জড়িত হয়ে শাস্তি এড়াতে, ব্যবসায় লোকসান দিয়ে ও পারিবারিক অন্যান্য কারণে নিজে থেকে তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এর আগে ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধির কথাও বলা হয়।
প্রথমে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী গুমের ঘটনার দায় নেয়নি। পরে উপজেলা-জেলা এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বাহিনীর উপরের দিক থেকেও পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারে সাহায্য মেলেনি। বরং তাদের ওপরও বিভিন্ন পর্যায়ে নজরদারি করা হয়। একটি স্বাধীন দেশে নাগরিকদের এমন অসহায়ত্ব অকল্পনীয়। পরে তারা ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে। পরিবারের সদস্যদের সন্ধান চেয়ে তারা কর্মসূচি পালন করছেন। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের হিসাবে সরকারের তিন মেয়াদে পাঁচ শতাধিক মানুষ গুম হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলছে, গত বছর বলপূর্বক নিখোঁজের শিকার ৮৬ জন।
গুম প্রতিরোধে জাতিসঙ্ঘ ২০১০ সালে একটি সনদ গ্রহণ করেছে। ৩০ আগস্টকে তারা আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করেছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। চারটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে জোরপূর্বক অন্তর্ধানের বিষয়ে বলেছে, মানবাধিকারকর্মী, নিখোঁজ পরিবারের সদস্য ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্তর্ধানের প্রতিটি ঘটনা স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে হবে। এমন ঘটনায় জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। গুমসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ অনুমোদন ও আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে গুমে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ আইন গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
মানুষের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের উচিত সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা। গাফিলতি ও ঘাপলা কোথায় রয়েছে তা চিহ্নিত করতে হবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, আর একজন ব্যক্তিও যেন এই নিষ্ঠুরতার শিকার না হয়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা