২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ

সার্বজনীন চিকিৎসা নিশ্চিত করুন

-

আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর ও নাজুক সেটি করোনা মহামারীকালে স্পষ্ট হয়েছে। এ খাতের সরকারি দফতর বা মন্ত্রণালয়ে কী পরিমাণ দুর্নীতি, অব্যবস্থা ও অদক্ষতা বিদ্যমান তা-ও উন্মোচিত হয়ে যায় ওই সময়ে প্রকাশিত নানা ঘটনায়। সেই পরিস্থিতির বিশেষ কোনো উন্নতি হয়েছে এমন বলার সুযোগ এখনো আসেনি। তবে সম্প্রতি এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর কিছু উদ্যোগ-আয়োজনের কথা বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, সরকার এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।
স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি নিয়ে একধরনের প্রচারণা আছে। বলা হয়, মানুষের গড় আয়ুর হিসাবে আমরা পাকিস্তান, এমনকি ভারতকেও পেছনে ফেলেছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো- শুধু ভারত বা পাকিস্তান নয়, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপাল ও মিয়ানমারের চেয়েও কম। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে সেবার যে মান তা অন্য কোনো দেশের সাথে তুলনীয় নয়। নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হন রোগীরা। সরকারি হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা বেশির ভাগ বাইরে থেকে করাতে হয়। ওষুধ বাইরে থেকে কিনে নিতে হয়। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে চিকিৎসাব্যয় সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। এ থেকে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থাহীনতা স্পষ্ট। বর্তমানে যে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে সেটি নিঃসন্দেহে শুভ উদ্যোগ; কিন্তু তাতে কতটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ আছে?
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে অভিযানে নামছে। চিকিৎসকদেরও উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সেবা ও পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এ ছাড়া কোনো নিবন্ধিত ডাক্তার অবৈধ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন না। এসব পদক্ষেপ দরকারি। কিন্তু বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে সেটি দেখার বিষয়। কারণ, দেশে আইন-কানুনের অভাব নেই; বরং আইন-বিধির প্রয়োগ ও মেনে চলার মানসিকতার বড়ই অভাব।
গত তিন মাসে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হয়েছে এক হাজার ৬৪২টি অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক। আবার নতুন করে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এক হাজার ৪৮৯টির। লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার প্রতিষ্ঠানের। সবার জানা, রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টি অন্য সব ক্ষেত্রের মতো স্বাস্থ্য খাতেও কালো থাবা বিস্তার করে রেখেছে। লাইসেন্স ছাড়াই বাণিজ্য চালাচ্ছে কয়েক হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিক। স্বাস্থ্যসেবা খাত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার মতো সদিচ্ছা ও নৈতিক শক্তি কি আমাদের আছে?
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান কিছু দিন আগে এক আলোচনায় বলেছিলেন, তিনি খুব হতাশ যে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে যে ব্যয় করা হয় তা জিডিপির অনুপাতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারিনি। প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা সবার জন্য ন্যূনতম চিকিৎসাসুবিধা নিশ্চিত করেছে এমন নয়। বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো বঞ্চিত। স্বাস্থ্য খাতে সবার আগে যেটি করণীয় সেটি হলো- দেশের প্রতিটি নাগরিককে চিকিৎসাসেবার আওতায় নিয়ে আসা। এরপর আসবে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করার প্রশ্ন। এ জন্য বড় ধরনের পরিকল্পনা নিতে হবে। দেশে চিকিৎসার সুযোগ আছে এমন কোনো রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে পারবেন না, এমন আইন করা কি সম্ভব? রাজনীতিকরা কি বলতে পারবেন, দেশে চিকিৎসা নেবো, বিদেশে যাবো না! যদি বলতে পারেন, তাহলে দেশে সব রোগের উন্নত চিকিৎসাসুবিধা তারা নিশ্চিত করবেন। এ খাতে যত সমস্যা-সঙ্কট আছে সব তারা দূর করবেন। বক্তৃতা বিবৃতিতে দেশপ্রেম আর জনদরদি হিসেবে নিজেকে জাহির করার পরিবর্তে কাজের মাধ্যমে এর প্রতিফলন দেখতে চায় দেশের মানুষ।


আরো সংবাদ



premium cement