২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিরোধীদের দমানোর কৌশল

অধিকারের অস্বীকৃতি

-

বাংলাদেশে রাজনীতি চর্চায় বিরোধীদের জন্য সামান্য জায়গাও রাখা হয়নি। বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে এ প্রবণতা কঠোর থেকে কঠোরতর হয়েছে। বিরোধীদের রাজনীতি দমানো হয়েছে সরাসরি শক্তি প্রয়োগ করে। সরকারের দমননীতি বাস্তবায়নে কোনো রাখঢাক নেই। গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চা এ দেশ থেকে একপ্রকার বিদায় নিয়েছে। এ কারণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র অকার্যকর করা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে প্রায়ই। একপর্যায়ে সরকারের কিছুটা উপলব্ধি দেখা গিয়েছিল। এ বদনাম ঘোচানোর উদ্যোগ কিছুটা হলেও দেখা গিয়েছিল। অল্প সময়ের ব্যবধানে দেখা যাচ্ছে, সরকার ধারাবাহিকতা রক্ষা না করে আবার আগের নীতিই বেছে নিয়েছে।
সরকারের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে বিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রামের অধিকার দেয়ায় ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। যেন সরকারি বিভিন্ন বাহিনী কোনো ধরনের শক্তি প্রয়োগ না করে তারও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। অথচ মাঠে এর অনুশীলন করতে গিয়ে বিরোধীরা আগের মতো বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। ক্ষেত্রবিশেষে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও সরকারি দল যৌথভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে বিরোধীদের ওপর। সরকার নীতিতে পরিবর্তন আনার যে আভাস দিয়েছিল তা নিয়ে এখন সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলগুলো প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ছয় দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলার মধ্যে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের আক্রমণাত্মক অবস্থান। তারা অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করছেন, তাদের কার্যালয় এমনকি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে হামলা চালাচ্ছেন। অন্য দিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।
গত শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে একই রকম হামলা হয়েছে। এতে ৬২ জন আহত হয়েছে। মাগুরায় বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করে দেয়া হয়েছে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কয়েক শ’ নেতাকর্মী এ হামলা চালান। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ককটেল ইত্যাদি নিয়ে তারা প্রকাশ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা চালান। অস্ত্রসজ্জিত হয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে মাগুরা শহরে মহড়া দিয়েছেন। বরিশালের বাকেরগঞ্জে বিএনপির একটি প্রস্তুতি সভা চলাকালীন ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী হামলা চালান। এতে বিএনপির ৩০ নেতাকর্মী আহত হন। বরগুনায় একই ধরনের হমলার ঘটনা ঘটে। তার আগের রাতে যশোরে বিএনপির স্থানীয় চার শীর্ষ নেতার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এতে তাদের বাসভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সারা দেশে ক্ষমতাসীন দল একই কায়দায় হামলা চালাচ্ছে। এতে এমন ধারণা হয় যে, একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব করা হচ্ছে। মোট কথা, বিরোধীদের রাজনৈতিক অধিকার দিতে রাজি নন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রয়োজনে রক্ত ঝরিয়ে জবরদস্তির নীতি অব্যাহত রাখতে চান। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ অবস্থান থেকে বিরোধীদের রাজনৈতিক অধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা আবার ভঙ্গ করা নজিরবিহীন ঘটনা। এভাবে একের পর এক অন্যায়-অনিয়ম করে শাসকরা দেশকে আসলে কোথায় নিয়ে যেতে চান? বাংলাদেশে বিরোধীদের রাজনীতি চর্চাকে যে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এখনো তা-ই বহাল রয়েছে।
নিরঙ্কুশ ক্ষমতার এই নেতিবাচক চর্চা গণতন্ত্রসচেতন মানুষকে আরো হতাশ করবে। একটি জাতি এমন একটি বিশৃঙ্খল ও জবরদস্তি অবস্থার মধ্যে কতদিন পথ চলবে। জনসাধারণ এ পরিস্থিতির পরিবর্তন চায়। যেখানে সবার রাজনীতি করার সমান অধিকার থাকবে। নির্ভয়ে কথা বলতে এবং কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করার সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। সরকারের উচিত বিরোধীদের জন্য রাজনৈতিক অধিকার চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করা। যারা এতে বাধা দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement