সমন্বিত কার্যক্রম আবশ্যক
- ২৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
দেশে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে অনেক আগেই। মাদকের মারণ ছোবল বিশেষ করে তরুণদের বিপথগামী করছে। আর এর অনিবার্য পরিণতিতে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে নৃশংস খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, চুরির মতো অপরাধ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন অবকাঠামো সক্রিয় থাকলেও মাদকের আগ্রাসন রোধ করা যাচ্ছে না।
মাদকের বিস্তার রোধে সমাজবিজ্ঞানী, আইনজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সমাজতাত্ত্বিকরা নানা ধরনের সুপারিশ, পরামর্শ বিভিন্ন সময় তুলে ধরেছেন। সেগুলো খুব একটি আমলে নেয়া হয়েছে কিংবা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে এমন নয়।
কিছু দিন আগেও সরকারের তরফে মাদক বিষয়ে জিরো টলারেন্সের বহুল উচ্চারিত ঘোষণা শোনা যেত। সেটিও এখন আর শোনা যায় না। ফলে পরিস্থিতি যেখানে ছিল সেখানে থেকে গেছে এবং মাদকের কালো থাবা ক্রমেই আরো বিস্তৃত হচ্ছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, পুলিশ দম্পতি খুন হচ্ছে মাদকাসক্ত মেয়ের হাতে। মাদকসংশ্লিষ্ট অপরাধের দায়ে বিদেশে কর্মরত কূটনীতিককে ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। দেশের শীর্ষ অভিনেত্রী মাদক মামলায় জড়িয়ে পড়ছেন। এ অবস্থা এক দিনে হয়নি। বছরের পর বছর ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আজকের পরিণতি ডেকে এনেছে।
বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর এসেছে, মাদক-সম্পর্কিত যেসব মামলা হয়; সেগুলোর যথাযথ বিচার হয় না। এর পেছনে আছে অনেক কারণ। সবচেয়ে বড় কারণ মামলায় তথ্যপ্রমাণ উপস্থিত করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের অপারগতা। ত্রুটিপূর্ণ এজাহার দাখিল, সুষ্ঠু তদন্তের অভাব- ইত্যাদি কারণেও মামলা নাকচ হয়ে যায় অথবা আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। এ জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকার বিষয়টিও উঠে আসে নানা পর্যায়ের আলোচনায়।
গত রোববার একটি সহযোগী দৈনিকের খবরে জানা যায়, এজাহার দায়েরের ক্ষেত্রে ত্রুটির কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) দায়ের করা মাদক মামলায় অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে যাচ্ছেন। খবরে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত আট বছর চার মাসে মাদকের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৭৩ হাজার ৩১২টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮ হাজার ৫৪০টি মামলা। নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে খারিজ হয়ে গেছে ১০ হাজার ৫৫টি। ১৮ হাজার ৫৪০টি মামলায় মোট আসামি ছিলেন ২০ হাজার ৪৯০ জন। এর মধ্যে খালাস পেয়েছেন ১১ হাজার ৫৯৯ জন। অর্থাৎ বেশির ভাগ আসামি খালাস পেয়ে গেছেন। দণ্ডিত আসামির সংখ্যা আট হাজার ৮৯১ জন।
মামলার এমন পরিণতি কেন? সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও খোদ ডিএনসির এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে কারণটিও উল্লেøখ করা হয়েছে খবরে। বলা হয়েছে, এর পেছনে মূলত আটটি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ত্রুটিপূর্ণ এজাহার দাখিল, তদন্তে ত্রুটি-বিচ্যুতি, মামলায় সফলতা অর্জনে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় মৌলিক প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি। সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে না পারা, হাজির হলেও ভিন্নতর সাক্ষ্য দিয়ে মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়া- ইত্যাদিও মামলা নাকচ হয়ে যাওয়ার কারণ।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের প্রধান এ প্রসঙ্গে বলেন, মাদক মামলার সাথে প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা থাকে। তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে খুব শক্তিশালী। ফলে মাদক মামলায় গ্রেফতার হলেও ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিট ও প্রভাবশালীদের প্রভাবে মামলাগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণে বেশির ভাগ অভিযুক্ত খালাস পেয়ে যান।
জাতির ভবিষ্যতের কাণ্ডারি তরুণ সমাজকে সুষ্ঠু-স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত করে গড়ে তুলতে হলে মাদক নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য যত দ্রুত সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নেয়া যায় ততই মঙ্গল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা