ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের অনীহা
- ২৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০৫
আমাদের দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশের না ফেরার বিষয়টি নতুন নয়, এটি দীর্ঘদিনের প্রবণতা। এমন কাজ চূড়ান্তভাবে অনৈতিক হলেও নিন্দনীয় প্রবণতাটি বাড়ছে। অথচ শিক্ষা ছুটিকালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই সব শিক্ষকের বেতন-ভাতাসহ সব খরচ বহন করে। শর্ত থাকে, নির্ধারিত শিক্ষাছুটি শেষে দেশে ফিরতে হবে। কিন্তু দেশে ফেরা তো দূরের কথা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও উত্তর পর্যন্ত দেয়ার প্রয়োজনবোধ করেন না অনেকে। শিক্ষকসমাজের একটি অংশ শিক্ষকতার আদর্শ থেকে সরে আসায় এমন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। এতে একদিকে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হচ্ছে শিক্ষকসঙ্কট।
সম্প্রতি ইউজিসির এক প্রতিবেদনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশে গিয়ে একটি অংশের লাপাত্তা হওয়ার তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ৬৮০ জন শিক্ষক বিদেশে শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন। তবে ছুটি শেষ হলেও দেশে ফেরেননি ২৭১ জন। দীর্ঘ দিন দেশে না ফেরায় ১২০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
ইউজিসির সূত্র মতে, বিদেশে যাওয়া শিক্ষকরা বৈতনিক, অবৈতনিকসহ বিভিন্নভাবে সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত ছুটি নিতে পারেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারো ডিগ্রি বা গবেষণা শেষ না হলে আরো দুই বছরের অবৈতনিক ছুটি দেয়া হয়। তবে নিয়ম হলো- চার বছর ছুটি ভোগের পর দেশে ফিরে কাজে যোগ দিতে হবে। এরপর আবেদন করতে হবে দুই বছরের ছুটির জন্য। এ ছাড়া চার বা ছয় বছর ছুটি ভোগের পর কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে, ছুটির সময় নেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। অথবা সমপরিমাণ সময় চাকরির পর অব্যাহতি নিতে হয়। কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া অনেকে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছুটিকালীন বিদেশে অর্থ উপার্জন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উচ্চশিক্ষার জন্য ৫০ শতাংশ শিক্ষকের বিভিন্ন শর্তে বৃত্তি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার নিয়ম রয়েছে। তাদের কেউ দুই বছরের ছুটি নিয়ে গেলেও ছুটি শেষের তিন মাস আগে নানা অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরো ছয় মাস বা এক বছর ছুটি বাড়িয়ে নেন। যাদের রাজনৈতিক প্রভাব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আনুকূল্য আছে; তারা বাড়তি ছুটি দ্রুত পেয়ে যান। এভাবে ছুটি বাড়ালেও ফিরে আসেন না।
এটি সত্যি যে, দেশের শিক্ষার মান বাড়াতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষায় বৃত্তির সুবিধা দিয়ে বিদেশে পাঠাতে হবে। তবে বিদেশে থেকে যাওয়ার প্রবণতা রোধে কোর্স অনুযায়ী প্রথম ধাপে দুই বা তিন বছর যে ছুটি নেবেন তা শেষ হলে পরবর্তীতে ছয় মাস, এক বছর বা দুই বছর পর্যন্ত বিনা বেতনে ছুটি দেয়া যেতে পারে। যারা পাঁচ-ছয় বছর বা এর বেশি সময় বিদেশে আছেন তাদের চাকরিচ্যুত করাই শ্রেয়।
বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে শিক্ষকদের লিখিত চুক্তি থাকে। যেসব শিক্ষক ফিরে আসতে অনীহা প্রকাশ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ঢিলেমি করা চলবে না। বাস্তবতা হলো- যারা নিয়মমাফিক বিদেশে উচ্চডিগ্রির জন্য গিয়ে নির্ধারিত সময়েও ফিরছেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রয়েছে। যারা ফিরছেন না তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা ও নোটিশ দেয়া হয়। জবাব না দিলে যথাযথ প্রক্রিয়ার গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুসরণ করার কথা থাকলেও কেন করছে না; এটি এক রহস্য। আমরা মনে করি, বিদেশে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেশে ফেরাতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোরভাবে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা