২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম

ইসির সিদ্ধান্ত অভাবিত নয়

-

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সিদ্ধান্তে দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য এবং ক্ষমতাসীন দল ও এর কিছু সমর্থক দলের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।
গত কয়েক মাসে ইসি দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ২৮টির সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে। ১১টি দল ইসির আলোচনার আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি অনাস্থার কারণে। আলোচনায় অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থক কিছু নামসর্বস্ব দল ইভিএম মেশিনে ভোট নেয়ার পক্ষে মত দেয়। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেয়।
মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ যেসব দল কমিশনের আলোচনায় যায়নি তারাও নির্বাচনে যন্ত্র ব্যবহারের ঘোরতর বিরোধী। এ পরিস্থিতিতে ইসি তার কার্যক্রম ও নির্বাচনবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এমন দৃষ্টান্ত জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারত যাতে করে সংস্থাটির ওপর রাজনৈতিক দল, সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও সাধারণ মানুষের আস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। কিন্তু ইসি সেদিকে যেতে পারেনি। নির্বাচনে যন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের ইচ্ছাই বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের যে প্রতিক্রিয়া তাতে ওই ধারণাই ব্যক্ত হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্তে চলমান সঙ্কট ও জটিলতা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজনৈতিক দলগুলোও এর কঠোর সমালোচনা করেছে। দলগুলো বলছে, কমিশন যে সরকারের বেঁধে দেয়া ছকে হাঁটছে- এ সিদ্ধান্তই তার প্রমাণ। যেমন- বিএনপি ইসির এ সিদ্ধান্তে খুব একটা অবাক হয়নি। দলটির অভিযোগ, ইসি সরকারি দলের উদ্দেশ্য হাসিলে কাজ করছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইসির সাথে আলোচনায় এতগুলো রাজনৈতিক দল, নির্বাচনে সহযোগী সংস্থা, সুশীলসমাজ সংলাপে ইভিএমের ত্রুটি নিয়ে যে এত এত মতামত দিলো এর কোনো কথাই তারা আমলে নিলো না। তারা এই মানুষগুলোকে অপমান করল। তিনি বলেন, আমাদের ইভিএম যে ত্রুটিযুক্ত তা আগের নির্বাচনগুলোতে প্রমাণিত। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ভোটারদের অনাস্থার জায়গা থেকে ইভিএম ব্যবহার মোটেও গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং এ সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জনমনে ঘোরতর সংশয় ও আস্থাহীনতা তৈরি হবে। আর সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করে বর্তমান ইসি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো একটি ব্যর্থ নির্বাচন করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দিয়েছে। আমরা আগে থেকে বলে আসছি, আওয়ামী লীগ এবার নতুন কৌশলে অর্থাৎ ইভিএমের মাধ্যমে চুরি করবে। তা করার জন্যই আওয়ামী লীগের পরামর্শে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে।
এমনকি আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, নির্বাচন কমিশন আমাদের মতামত আমলে নেয়নি। আমরা ইভিএমের বিপক্ষে বলেছিলাম। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হবে। জাসদ সভাপতি আ স ম রব বলেন, এ সিদ্ধান্ত আগামী সংসদ নির্বাচনে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর নীলনকশার অংশ। এটি গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত।
বর্তমান ইসি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারবে এমন কোনো লক্ষণ দেখাতে পারেনি। বরং উল্টো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে গত জুন মাসে কুমিল্লøা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। সেটিই ছিল এ ইসির অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচন। তাতে ইভিএমে নেয়া ভোট গণনা ও ফল প্রকাশে ইসির সিদ্ধান্ত বিতর্কিত হয়ে আছে।


আরো সংবাদ



premium cement