২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় আস্থাহীনতা

বিদেশ যাচ্ছেন বিপুল রোগী

-

আমাদের দেশে উন্নত চিকিৎসার অবকাঠামো থাকলেও সেবার মান তলানিতে। বিশেষ করে দেশের বহু চিকিৎসকের আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই। অন্য দিকে, একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিনে গড়ে ৫০-৬০ জন রোগী দেখে থাকেন। এ কারণে অনেকসময় রোগ নির্ণয় করতেও ভুল হয়ে যায়। বাস্তবে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগীদের। এ জন্য দেশীয় চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর আস্থা এবং ভরসা কোনোটিই জনগণের নেই।
দেশীয় চিকিৎসাব্যবস্থায় আস্থাহীনতা, দীর্ঘসূত্রতা আর ভোগান্তিতে বিদেশমুখিতা বাড়ছে দিন দিন। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে জানা যায়, কম টাকা খরচে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সুচিকিৎসা পাওয়া যায় বিধায় ২০১০ সাল থেকে চিকিৎসা-পর্যটন বেশি বেড়েছে। দেখা গেছে, জটিল রোগ ছাড়া থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারতে চিকিৎসা নিতে আনুমানিক এক লাখ টাকা খরচ হয়। তবে ভারতে ট্রেন বা বাসে গেলে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ পড়ে।
করোনার কারণে গত দু’বছর রোগীদের বিদেশযাত্রায় ছেদ পড়েছিল। এখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় চিকিৎসা নিতে রোগীদের বিদেশে যাওয়ার হার বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের চিকিৎসা ভিসা নিতে প্রতিদিন থাকছে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। থাইল্যান্ডের ভিসা কার্যক্রমে শিথিলতা আসায় সেখানেও যাচ্ছেন অনেকে। বাংলাদেশ আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস ফোরামের (বিওটিওএফ) সর্বশেষ তথ্যমতে, প্রতি বছর গড়ে আট লাখ মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। এর বড় অংশ যান ভারতে। দ্বিতীয় প্রধান গন্তব্য থাইল্যান্ড। আর তৃতীয় স্থানে আছে সিঙ্গাপুর।
বিওটিওএফের পরিসংখ্যান হলো- প্রতি বছর বিদেশে বাংলাদেশীদের চিকিৎসা নিতে খরচ হচ্ছে ৪০০ কোটি ডলার। ২০২১ সালের জুনে টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ বাংলাদেশী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপের তথ্যমতে, বিদেশে বাংলাদেশী পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি অংশ সাড়ে ২৯ শতাংশ ব্যয় করেন চিকিৎসা বাবদ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের বাইরে এ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে বহির্গামী পর্যটনে মোট ব্যয় ছিল ৩৩ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারি বরাদ্দ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম। আবার গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবায় সরকার যতটুকু অর্থ ব্যয় করে, ততটুকুতেও স্বাস্থ্যসেবার মান ভালো নয়। অন্য দিকে, বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার অভাবে স্বাস্থ্য খাতের কম বরাদ্দ বাজেটও খরচ হয় না। করোনাকালে ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের ২৯ শতাংশ টাকা মন্ত্রণালয় খরচ করতে পারেনি।
প্রতিবেশী দেশগুলোতে রোগীর চিকিৎসা ও রোগ শনাক্তে উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়। চিকিৎসা ব্যয়ও কম। প্রতিবেশী দেশে বহু প্রতিষ্ঠান এমন রয়েছে, যেগুলো নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়। অন্য দিকে, আমাদের দেশে বেসরকারি খাতে ভালো মানের হাসপাতালও কম। এমনকি দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভালো মানের হাসপাতাল নেই। ফলে সরকারি হাসপাতালে অগণিত মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হন। আবার যে কয়টি বেসরকারি হাসপাতালে মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়া যায়, সেগুলোতে চিকিৎসা ব্যয় সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। একই সাথে কতগুলো চিকিৎসা দেশে এখনো হয় না। এর জন্য দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দায়ী।
বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, দেশীয় চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর আস্থাহীনতা এবং দেশীয় চিকিৎসাসেবার দুর্বলতায় মানুষ বাইরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। চিকিৎসকের তুলনায় রোগী অনেক বেশি। ফলে বেসরকারি হাসপাতালেও রোগীর উচ্চচাপ রয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে প্রতিবেশী দেশগুলোর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মতো দেশের বেসরকারি খাতের হাসপাতালগুলোতে সেবার মান বাড়াতে হবে। এ জন্য বিদেশী বিনিয়োগও নেয়া যেতে পারে। সেই সাথে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নজরদারি প্রয়োজন, যা খুব দুর্বল।


আরো সংবাদ



premium cement